জেনে নিন ইতালীতে বিয়ে করে অভিবাসন নিয়মকানুন
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৬:৫২,অপরাহ্ন ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ২২৭ বার পঠিত
কয়েক বছর ধরে শরণার্থীসহ সাগর পথে অবৈধভাবে এসে অভিবাসীরা আশ্রয় খুঁজছেন ইউরোপের দেশগুলোতে। এই শরণার্থীদের পুনর্বাসনে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ইউরোপে শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও, অসহায় হয়ে পড়েছেন দীর্ঘদিন থেকে ইউরোপে বৈধতা পাবার আশায় বসে থাকা শত শত অবৈধ অভিবাসী। সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার কারণে রাজনৈতিক আশ্রয়ে কড়াকড়ি বিষয়টিকে আরো দুরূহ করে তুলেছে। সাগর পথে অবৈধভাবে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে অভিবাসন প্রত্যাশীরা সব থেকে বেশি আসে ইতালীতে। ইতালীর সরকার এই ঢলের মতো আসা অভিবাসীদের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এখানে আগে থেকে যারা বৈধতা পাবার দিন গুনছিলো তাদের হতাশা বাড়ছে প্রতিদিনই। অনেকেই কোন উপায় না পেয়ে, বসবাসের বৈধতা পাওয়া কাউকে বিয়ে করে নিজে বৈধতা পাবার চেষ্টা করছেন।
বিয়ে করে বৈধতা পাবার প্রক্রিয়াটি একটু দীর্ঘ হলেও অনেকেই কোন উপায় না পেয়ে এই পথেই এগোচ্ছেন। ইতালীতে অভিবাসন আইন অনুযায়ী, বিয়ে করে বৈধতা পেতে হলে কয়েকটি ধাপে এগোতে হবে এবং বৈধ কাগজ হাতে পেতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। প্রথমে পাত্র এবং পাত্রীর, বাংলাদেশে নিজের শহরের ডিসি অফিস থেকে অবিবাহিত সার্টিফিকেট আনতে হবে। তারপর ইতালীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ২৫ ইউরো ফিসহ জমা দিয়ে ‘nulla osta’ অর্থাৎ ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। তারপর আবেদনকারী যে শহরে বসবাস করছেন, সেখানকার comune (পৌরসভা) তে দুইজনের পাসপোর্ট, নুল্লাওস্তা (ছাড়পত্র), রেসিডেন্ট জমা দিয়ে বিয়ের একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করতে হবে। নির্দিষ্ট তারিখে পৌরসভায় উপস্থিত হয়ে বিয়ে সম্পন্ন করার এক সপ্তাহ পর সেই পৌরসভা থেকে ম্যারেজ (বিবাহ) সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। পরের ধাপে যাওয়ার আগে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, আইন অনুযায়ী বিবাহিতদের একটি সন্তান নিতে হবে। সন্তানের জন্মের পর comune (পৌরসভা)’য় সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট, ওসপিটালিটা, পাসপোর্ট এবং দু’জনের মধ্যে যার ইতালীতে থাকার বৈধ কাগজ আছে তার সৌজর্নো ও পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে আর্টিকেল ৩১ (articolo 31) আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন পত্রটি tribunale di minorenni (অপ্রাপ্তবয়স্কদের আদালত)’তে জমা দিতে হবে।
জমা দেয়ার ৬-৭ মাস পর আদালত সৌজন্যমূলক জিজ্ঞসাবাদের জন্য আদালতে উপস্থিত হবার একটি তারিখ দেবে। সেই নির্দিষ্ট তারিখে সেখানে দু’জনকে উপস্থিত হতে হবে। জমা দেয়ার পর আপনার আবেদনপত্র, আপনি যে শহরে আছেন সেখানকার পৌরসভার সোশ্যাল কেয়ার (assistenza sociale del comune di appartenenza) এর কাছে পাঠাবে আদালত। এরই মধ্যে ডাক্তারের অনুমোদিত একটি বাসা নিজের নামে ভাড়া অথবা পরিচিত কারো কাছ থেকে ওসপিটালিটা (ospitalita) সংগ্রহ করে সে বাসায় বসবাস করতে হবে। কারণ ৬০ দিনের মধ্যেই পুলিশ তাদের কাছে উল্লেখিত বাসায় আপনি বসবাস করছেন কি না তা দেখতে আসবে এবং সে রিপোর্ট আদালতে পাঠাবে। এই রিপোর্ট যাওয়ার প্রায় ৩ মাস পর, আদালত আপনার বাসার ঠিকানায় আপনার বৈধতা পাবার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে অনুমোদনপত্র (il decreto) পাঠাবে। এই অনুমদোনপত্র হাতে আসার পর নিম্নলিখিত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে ইমিগ্রেশন অফিস অর্থাৎ কস্তুরায় নিয়ে যেতে হবে।
২)Bollettino postale (30,46 euro) .
৩)Dichiarazione di ospitalita o il contratto di casa .
৪)Certificato di matrimonio.
৫)Certificato di nascita di figlio.
৬)Passaporto entrambi genitori.
৭) Quatro coppie di foto entrambi genitori e di figlio.
৮)Pasaporto figlio.
৯)Il decreto tribunale.
উল্লেখিত কাগজপত্র ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর তারা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার জন্য একটি তারিখ দেবে। সেই তারিখে উপস্থিত হয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার পর আপনার সৌজর্নো তৈরি হলে ফোনে মেসেজ পাঠাবে অথবা ইমিগ্রেশন অফিসের ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনি দেখতে পারবেন আপনার কাংখিত সেই সৌজর্নো হাতে পাবার তারিখ। তবে বৈধতা পাবার আশায় বিয়ে করার আগে অবশ্যই ইমিগ্রেশন অফিস অথবা কোন আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে নেবেন। ইতালীর বিভিন্ন শহরে এই নিয়মাবলীর কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে।
BY : TOPFFAZZAL TOPU ( ITALY ) COURTESY : PROBASH KOTHA