আপন জনপথ সমৃদ্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ আমরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৫:২৩,অপরাহ্ন ১৫ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ৫০৮ বার পঠিত
কামরুল হাসান জনি
একজনের পিঠের উপর ভর করে অন্যজনের সদস্য ফরম পূরণ করার দৃশ্যগুলো আমাকে আনন্দ দিচ্ছিল, আরো বেশি উৎসাহীত করছিল সে মুহূর্তগুলো, গভীর তাড়না সৃষ্টি করছিল মনে। পরবাসের বুকে অবস্থান হলেও একঝাঁক তরুণ ক্লান্তিহীন চেহারার প্রতিচ্ছবি দেখতে চান নিজের জন্মভূমির, সে ভূমির সুরভিত বাতাসে আগামী প্রজন্মের জন্যে তৈরি করতে চান একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এখানেই ভাললাগা গভীর হয়। এ তরুণদের নিয়ে বহুদূরের পথ পাড়ি দেয়ার শপথ বাক্যের কয়েকটি চরণও এখানেই উচ্চারিত হয়ে যায় মনের অজান্তে। বলছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে একঝাঁক তরুণের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে তৈরি সংগঠন মিরসরাই ইয়ুথ ফোরামের কথা।
গত শুক্রবার ১১ নভেম্বর ছিল মিরসরাই ইয়ুথ ফোরাম ইউএই এর দ্বিতীয় প্রস্তুতি সভা। পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী স্থান নির্ধারণ ছিল আল আইন জাহলি পার্কে। সভায় যোগ দিতে কর্মস্থল দুবাই হতে রওনা হই সন্ধ্যা সাতটায়। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের সড়ক-মহাসড়ক অতিক্রম করে পৌঁছলাম আমিরাতের গ্রীণ সিটিতে। ছুটির দিন হওয়ায় শারজা-দুবাই সড়কগুলোর মত তিক্ত যানজটের কবল থেকে রেহাই পেলেও পার্ক এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিয়ে অবতরণ হয় বিরক্তিকর পরিস্থিতির। নির্দ্দিষ্ট পার্কিং এরিয়া ছেড়ে কিছুটা দূরত্বে গাড়ি পার্ক করে যতক্ষণে পার্কে প্রবেশ করি ততক্ষণে জানতে পারি আসাদ নুর ভাই, হাফিজ ভাই, লিটন ভাই, ফজলুল সহ দুবাই থেকে আসা বেশ কয়েকজনের একটি টিম পার্কেই অবস্থান করছিলেন। আমার সঙ্গে ছিল সহযোদ্ধা হালিম, বাবলু। আমাদের কালক্ষেপন হয়নি। ঘড়ির কাটা ন’টা পার হলেও আল আইন টিমের সদস্যদের খুব একটা দেখা মিলছে না তখনো। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, আমাদের আগমন উপলক্ষে তারা খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত! শুরু হলো নতুন করে অপেক্ষা। এরমধ্যে পার্কে আসেন আবুধাবী থেকে কয়েকজন প্রবাসী। আল আইন থেকে বন্ধু আরিফ সহ ৭-৮ জন।
সময় তখন দশটা। সবুজ ঘাস আর গাছগাছালির সমারোহ থাকলেও রাতে তা খুব একটা দৃশ্যমান ছিলনা, কেবল চারদিকের ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো উজ্জ্বল করে ফুটিয়ে তুলছিল রাতের সৌন্দর্য। পার্কের একেবারে বাইরের অংশে তথা রাস্তার পাশাপাশি আমরা চক্রাকার হয়ে বসে যাই। বিপরিতমুখী আলো কারো কারো চোখে মুখে পড়ছে, আবার কারো চেহারা অন্ধকারে। বলে রাখা ভাল, এদেশটা রাতেই অধিক সুন্দর দেখায়, দিনের আলোর চেয়ে রাতের আলোকবাতি সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রাখে। আসাদ নুরের সঞ্চালনায় শুরু হলো প্রস্তুতি সভার কাজ। পুরো সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে বক্তব্য করতে হলো আমাকে। আলোচনা চলাকালীন লক্ষ্য করলাম সকলের চোখে মুখে দারুণ উৎসাহ আর প্রবাসী ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিজের এলাকার জন্যে কিছু একটা করার দারুণ আগ্রহ। আমি এই আগ্রহটুকু চেয়েছিলাম। তাদের হৃদয়ের কথা, চোখে স্বপ্নের মত জাগাতে চেয়েছিলাম এমনই সুপ্তধারায়। আলোচনায় অংশ নিলেন লিটন ভাই, সেলিম ভাই, রনি, হাসান, আরিফ সহ আরো বেশ কয়েকজন। সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সবার কাছে একেবারেই পরিস্কার করে উপস্থাপনও করা হলো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রায়ই সামাজিক ও সেচ্চাসেবী সংগঠনের সদস্যরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা তুলেন। একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে যেখানে জনগণকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হয়, সেখানে সেদেশের তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি এমন বৈরি আচরণ মুলধারার রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই! যাই হোক, উপস্থিত সকলেই বুঝে নিলেন এ সংগঠনটি প্রবাসে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা, প্রবাসীদের সুখে-দুঃখের সাথী হওয়া সহ মিরসরাইয়ের উন্নয়নে নিজেদের অগ্রনী ভূমিকা রাখতেই মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতিপূর্বেও ইয়ুথ ফোরামের একটি প্রস্তুতি সভা করা হয়েছিল। দুবাইয়ের ক্রিক পার্কে সেদিন ৩০ জন সদস্যের প্রাণবন্ত আড্ডার দ্বিতীয় অংশই বলা চলে এটিকে। আসল কথা হলো, যেখানে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্বচ্ছ সেখানে পরাজয়ের ভয় নেই। সভার শেষ দিকে যখন একে একে অনেকে বক্তব্য করছিলেন, তখন মনে হলো এ যেন দীর্ঘদিন কিছু একটা না পাওয়ার বেদনা মুখে প্রকাশ করছেন তারা। ভাব ভঙ্গিতে এও প্রকাশ হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হতে দীর্ঘ সময় লেগে গেলেও, সময় একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। কবি হেলাল হাফিজ তার সেই কবিতারা ক’টি লাইন এদের জন্যেই হয়ত লিখেছিলেন- ‘ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ‘।
আলোচনা পর্ব শেষেই সবাই নিজ নিজ উদ্যোগে সদস্য ফরম পূরণ করা শুরু করলেন। অনেকে প্রশ্নও করেছিলেন- সদস্য হতে কি কোনো টাকা লাগবে ? উত্তরটা এ রকমই ছিল- আপনি আমি মিরসরাইয়ের বলেই-তো এখানে এসেছি, নিজের এলাকার প্রতি ভালবাসার বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখার শপথ নিয়েছি, তাহলে আবার সদস্য হতে টাকা লাগবে কেন ! আমরা সবাই তো মিরসরাইয়ের, মিরসরাই আমাদের। উপস্থিত প্রায় ৩৫ জন মিরসরাই প্রবাসী বন্ধুগণ সদস্য ফরম পূরণ করলেন। শেষে সবাই মিলে যোগদেন নৈশ ভোজে। অবশ্য এ আয়োজনের পুরো কৃর্তীত্ব আল আইন টিমের চালিকাশক্তি প্রিয় করিম ভাইয়ের। তার সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন রনি, সালাউদ্দিন, টিপুরা। পার্কের সবুজ ঘাসে বসে খেতে খেতে হয় আড্ডা-গল্প। আর এরমধ্য দিয়ে সকলেই মনে মনে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। সকলে প্রত্যায় ব্যক্ত করলেন একযোগে কাজ করার। এতে করে আমার-আমাদের স্বপ্নও আরো বড় করে পোষা শুরু হলো, এবার হবে। আমরা পারবো, আমাদের পারতেই হবে। একটি সমাজকে বদলে দিতে একেকটি উদ্যোগই যথেষ্ট। ব্যাস এবার শুধু সকলের সহযোগিতাটাই আমাদের পূঁজি হিসেবে কাজ করবে। একজন মিরসরাই প্রবাসী হিসেবে আমি যেমন চাই মিরসরাইযের মানুষের মঙ্গল, তেমনি চাই একজন মিরসরাই প্রবাসী হিসেবে আপনার সহযোগিতার হাত ধরেও আরো আরো সমৃদ্ধ হোক প্রাণের মিরসরাই।
লেখক : সাংবাদিক, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত।