মরুর দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৩:৩৮,অপরাহ্ন ২৩ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ১০৬৬ বার পঠিত
- মোস্তাকা মৌলা
আপন দেশের বাইরে মরুভুমির দেশ আরব, কিন্তু শহর-বন্দরে দেখে মনে হবে না এটা ‘মরুর দেশ’। অভিবাদন এদেশের সরকারকে, যারা আমাদের পরবাসীদের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন ।
আরবী, ইংরেজী, ফারসী, ফরাসী ইত্যাদি সকল ভাষায় শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবাসীদের সমান অধিকার রয়েছে । শিক্ষাঙ্গনে ‘শিক্ষা’ কে গুরুত্ব দেওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড়ে উঠেছে এশিয়ান নন-এশিয়ান স্কুলগুলো । তাতে লাখো লাখো প্রবাসী ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে এবং শিক্ষাজীবনেই কাজও করছে ।
১৯৯১ইং হতে ইসলামি গাইডেন্স সেন্টার থেকে আমার আমিরাতে শিক্ষকতা জীবনের শুরু , এতে অনেক বাঙালী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এবং তাদের অভিভাবকের সঙ্গে এক মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শিক্ষকদের জীবনে সমুদ্রের ঢেউ এর মত শিক্ষার্থী আসে এবং চলেও যায়। কারোও মুখ চোখে ভাসলেও নাম মনে পড়ে না। এ দীর্ঘ সময়ে কত শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে ভাল ভাল পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে। অনেকে মার্কিন দেশে আবার অনেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। আজ চিন্তা করতেই ভাল লাগে।
বিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার্থীদের মনের পরিবর্তন দেখা যায়। তারা ভিন্ন ভাষাভাষীর সঙ্গে মিলে-মিশে পার্থক্য খুজতে থাকে “বাংলা মায়ের” অবস্থান। কিভাবে তাকে উচ্চাসনে বসাবে ? শুনতে যেমন ভাল লাগে, সুযোগ করে দেওয়ার জন্যও মন চায়। মনে ঢেউ তুলে কবি নজরুলের কবিতা :
“থাকবো না-কো বদ্ধ ঘরে
দেখবো এবার জগৎটাকে “
আরবদেশে গ্রীষ্মকালীন ছুটি প্রায় দু’/তিন মাসের হয়। সে সময় বাঙালি শিক্ষার্থীরা নিজ দেশ ভ্রমণ করে ; ফিরে এসে প্রফুল্লচিত্তে বলতে থাকে , “ আমার দেশ কতো সুন্দর “!! খুশীতে মন ভরে যায় ওদের বচন শুনে। তারা খুঁজতে থাকে, কিভাবে আরোও সুন্দর করা যায়। ঐ যে আমাদের দেশের সোনার খনি, তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে প্রবীনদের ।
এ যাবত প্রায় ছ’টি শিক্ষাঙ্গনে পদচারনার ও পাঠ্যদান করার সুযোগ হয়েছে। প্রতি স্কুলে বা শিক্ষাঙ্গনে বাঙালী শিক্ষার্থীরা প্রায়শঃ প্রথমস্থান অধিকার করে। এটা সৃষ্টিকর্তার অশেষ দান। ধন্যবাদ, হাজারবার অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়েও শেষ করা যাবে না । আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে এ সুন্দর প্রাপ্তিকে ।
“অসির চেয়ে মশি বড়” প্রবাদবাক্য কাজে পরিণত করতে হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্থান সবার উপরে বুঝতে হবে।শ্রদ্ধার সঙ্গে চলার প্রয়োজন। আজ কাল প্রযুক্তির কাছে এ স্থানগুলো অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হবে, সৃষ্টিকর্তার পরেই মা-বাবার স্থান। শিক্ষক ও গুরুজনদের স্থান তাদের মান্য করা মনে প্রানে ও কাজে প্রমান করতে হবে। এটাই হবে তাদের জীবনের পরম সম্বল ও জীবনের সার্থকতা ।
—
লেখিকা। শিক্ষিকা, গাল্ফ ইন্ডিয়ান হাই স্কুল, দুবাই, সভাপতি, সংহতি সাহিত্য পরিষদ, দুবাই শাখা।