শিলং : মেঘের রাজ্যে মেঘেদের মিতালী
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৪:১০,অপরাহ্ন ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ৬৬০ বার পঠিত
……………………….মিলু কাশেম ( ট্রাভেল জার্নালিষ্ট)
শিলং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। চমৎকার
শীতল আবহাওয়া পাহাড় পর্বত বেস্টিত ভৌগলিক
গঠনের কারনে পাইন বনে শোভিত শিলংকে বলা হয়
প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। মেঘালয় মুলত পাহাড়ী রাজ্য।চারিদিকে রয়েছে পাহাড় পর্বত মালভূমি আর প্রাকৃতিক ঝর্ণা।এই রাজ্যের অধিবাসীরা মুলত খাসিয়া
জনগোষ্ঠী। শিলং এই রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। খুব সুন্দর
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত নগরী শিলং।নিত্য নতুন গাড়ীর
বহর ঝকঝকে রাস্তাঘাট আধুনিক স্মার্ট তরুন তরুনীদের পদচারনায় মুখরিত শিলং।হঠাৎ দেখলে
শিলংয়ের কোন কোন এলাকাকে ব্যাংকক বা হংকং
মনে হয়।পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষনীয় এই নগরী।
বিখ্যাত ওয়ার্ডস লেক, লেডী হায়দরী পার্ক,এলিফেন্ট
ফলস,উমিয়াম লেক,ডনবসকো মিউজিয়াম,চার্চ,
গলফ লিংক,শিলং পিক,রবীন্দ্রনাথ আর্ট মিউজিয়াম,
উওর পূর্ব ভারতের বড় দৃষ্টিনন্দন মাদানি মসজিদ সহ
অনেক দর্শনীয় জায়গা আছে শিলং শহরের আশে
পাশে।শিলং এর শীতল আবহাওয়া সবচে’ প্রিয় ভ্রমনপ্রিয় মানুষের। সারা বছর এখানে ইউরোপের মতো মিষ্টি শীতল পরিবেশ থাকে।শীতে অবশ্য প্রচন্ড
ঠান্ডা পড়ে।আমাদের সিলেট থেকে মাএ ৮০ মাইল
দূরের শিলংয়ে এতো চমৎকার জীবনযাএা আর আবহাওয়া যা কল্পনাতীত।
শিলং আমার প্রিয় এবং স্মৃতির শহর।১৯৯৫ সাল থেকে শিলংয়ের সাথে আমার যোগসূত্র। প্রতি বৎসর
অন্তত একবার হলেও যাওয়া হয়।পৃথিবীতে আমার
দেখা কিছু প্রিয় স্মৃতির শহর আছে।যেমন হল্যান্ডের আমস্টারডাম,জার্মানির মিউনিখ, ফ্রান্সের প্যারিস,হাঙেরীর বুদাপেস্ট, পোল্যান্ডের কনিন,ক্রাকাও, আর জার্মানির নেদারল্যান্ডস সীমান্তের সুন্দর শহর স্যানটেন। এই স্যানটেন এর আলো বাতাসে জড়িয়ে আছে আমার তারণ্যের এক
দশক।আর গত দুই দশক ধরে আমার বেশী সম্পর্ক
শিলংয়ের সাথে।শিলংয়ে আমার ছোট ভাইয়ের মতো
বন্ধু ফুজেল আহমদ গাজী।ভিকি নামে তাকে সবাই
চেনে।শিলংয়ে আমার বড় আশ্রয় ভিকি।আরেকটি
পরিবারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা শিলংয়ে। সেটি লাবান এর ওয়ানরী পরিবার।শিলংয়ের এই অভিজাত
পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত।
এদের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। প্রতিবার গেলে এদের বাড়ীতে যেতে হয়।ওয়ানরী পরিবারের কর্তা ৮০ বছরের মহিলা মিসেস ওয়ানরী থাকেন শিলং
থাকেন তার মেয়ে অধ্যাপিকা মিস ওয়ানরীকে নিয়ে।
তার অন্য সন্তানেরা দিল্লী কলকাতা কানাডায় থাকেন।
এই বৃদ্ধ মহিলা আমাকে সন্তানের মত স্নেহ করেন।তার
বাড়ীতে আমার দাওয়াত খেতে হয়।প্রতিবার তিনি আমার পরিবারের জন্য গিফট কিনে রাখেন। কষ্ট করে
হলেও তা আমাকে আনতে হয়।
গত কয়েক বছর যাবত আমি নিয়মিত শিলং যাই চোখের চিকিৎসার জন্য।সেই সুবাদে ঘনিষ্ঠতা এক ডাক্তার দম্পতি র সাথে।তারা হলেন ডাঃ সাইকা ও তার
স্ত্রী ডাঃ ভেনেসা সোরং।স্বামী স্ত্রী দু’জনই বিলেত ফেরত
চক্ষু বিশেষজ্ঞ। নিয়মিত যাওয়া আসার সুবাদে তারা ও
শিলংয়ে আমার প্রিয়জন।পেশাগত দায়িত্বের বাহিরে
তারা আমাকে সময় দেন। ডাঃ সাইকা প্রতিবার কিছু
প্রয়োজন ঔষধ গিফট করেন আমাকে।এভাবেই শিলং
এর প্রতি আমার ভালোলাগা তৈরী হয়েছে।এই শহরটির সামগ্রিক পরিবেশের সাথে আমি আমার ইউরোপ জীবনের স্মৃতির শহর স্যানটেন এর অনেক
মিল খুজে পাই।ক্লিন সিটি হিসাবে স্যানটেন এর খ্যাতি
ছিল ইউরোপ সেরা।পর পর চারবার ক্লিন সিটির খেতাব পেয়েছিলো স্যানটেন। ক্লিন সিটির খ্যাতি আছে
শিলংয়ের ও।ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সচেতন।সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শতশত গাড়ী। কেউ হর্ণ
বাজায় না ওভারটেক করে না।নেই যএতএ পার্কিং।
শিলং মেঘবৃষ্টি র শহর।যখোন তখোন বৃষ্টি নামে মুষল ধারে।বৃষ্টি শেষে ঝকঝকে রোদ।ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্তার কারনে নিমেষেই বৃষ্টির জল উদাও।নেই কোন
ধুলোবালি কাদামাটি। সত্যি অপূর্ব।
শিলং একবার গেলে বার যেতে মন চাই বে।খুব কম
খরচে সিলেটের তামাবিল হয়ে শিলং ঘুরে আসতে পারেন।সিলেট থেকে ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে শিলং যাওয়া
যায়।তামাবিল চেকপোস্ট পাড়ি দিয়ে ভারতে ডাউকি।
সেখানে ইমিগ্রেশন সেরে রিজার্ভ টেক্সি অথবা কিছুদূরে ডাউকি বাজারে গিয়ে শেয়ারে যেতে পারেন।
রিজার্ভ গেলে হাজার বারোশ’ রূপি শেয়ারে গেলে এক’শ দেড়শ’ রূপি লাগবে।
শিলং বেড়াতে গেলে প্রাইভেট টেক্সি অথবা মেঘালয়
ট্যুরিজমের গাড়ীতে চেরাপুঞ্জি সহ মেঘালয়ের দর্শনীয়
পর্যটন এলাকা গুলো দেখে আসতে পারেন।আর শিলং
যাবার পথে দেখে যেতে পারেন এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রাম
মাওলিনং আর ওয়াল্ড হেরিটেজ লিভিং রূট ব্রিজ।
যা অবশ্যই ভালো লাগবে।তাই সময় সুযোগ পেলে একবার ঘুরে আসুন বাড়ীর কাছের স্কটল্যান্ড শিলং। ( মিলু কাসেম / সাংবাদিক, শখ ঘুরে বেড়ানো, ছবি তোলা, ঘুরেছেন ইউরোপ এশিয়ার নানা দেশ, সিলেট বিভাগের একমাত্র ট্রাভেল জার্নালিষ্ট,, নিয়মিত লিখবেন প্রবাসের নিউজে / থাকেন সিলেটের আম্বরখানার বড়বাজার)
এলাকায়