ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ঃ অভিবাসীদের মধ্যে আতংক ৩০ বাংলাদেশী আটকের গুজবে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৩:৫০,অপরাহ্ন ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ১৭৪ বার পঠিত
এমদাদ চৌধুরী দীপু :
আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে উত্তাল হয়ে আছে আমেরিকা। গণতন্ত্র,শান্তি,সমৃদ্বি,উন্নতি-অগ্রগতি,মানবাধিকার,আর অভিবাসনের দেশ আমেরিকা বদলে গেছে। অশান্তির আগুন জ্বলছে সবখানে। সবচেয়ে কম জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর দায়িত্বহীন বেপরোয়া বক্তব্য,মন্তব্য আর স্বভাবসূলভ আচরনের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নতুন নতুন নজির সৃস্টি হচ্ছে। ২০ জানুয়ারী দায়িত্ব গ্রহনের মাত্র ১০ দিন পর আমেরিকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে মুসলমানদের মধ্যে। চলছে বিক্ষোভ- প্রতিবাদ। নিন্দার ঝড় ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশ। দেশে-বিদেশে উদ্বেগ আতংকের শেষ নেই প্রবাসীদের মাঝে। চরম দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রবাস থেকে দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া অভিবাসীরা। একই দুঃশ্চিন্তা যারা দেশ থেকে আমেরিকায় ফিরবেন তাদের মনেও। বিস্ময়কর হলেও আমেরিকা থেকে কানাডা,কিংবা অঙ্গ রাজ্যে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। দেশে যাওয়ার জন্য ইস্যু করা টিকেট বাতিল করছেন কেউ কেউ। আবার উমরাহ হজ্বের টিকেট করে সাহস পাচ্ছেন না কিছু যাত্রী,তারা যাত্রা বাতিলের জন্য ট্রাভেলসে ছুটে যাচ্ছেনু । ৩০ জন বাংলাদেশীকে আমেরিকা ফিরার পথে আটক করা হয়েছে এমন খবরে ক্ষোভ উত্তেজনা বিরাজ করছে বাংলাদেশীদের মাঝে। সংশ্লিস্টরা বলছেন এধরনের খবরের কোন ভিত্তি নেই, এসব গুজব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সাতটি দেশের নাগরিককে আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন সে তালিকায় বাংলাদেশ নেই । তবে সাধারন আতংকের কথা স্বীকার করে বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছ অনেকেই টিকেট বাতিল করছেন ভয়ে। প্রবাসীরা ট্যাভেল এজন্সীতে ফোন করে বাস্তব অবস্থা জানার চেস্টা করছেন । ঐতিহ্যবাহী ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ট্যাভেলস এর পরিচালক বিশিস্ট ব্যবসায়ী মোঃ মহসিন বাংলাপত্রিকাকে জানান তাদের অনেক গ্রাহক দেশে যাওয়ার বিষয় স্থগিতের কথা জানিয়েছেন । একটা ভিতি কাজ করছে। যদিও বাংদেশীদের ভয়ের কোন কারন নেই এমন মন্তব্য করে মহসিন বলেন ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ নেই । তাই বাংলাদেশের প্রবাসীদের আতংকিত হওয়ার বিষয় নয়। প্রবাসীদেও বিপদে পাশে দাড়ানোর জন্য কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটর প্রতি উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যনির্বাহী সভা হয়েছে রোববার রাতে। প্রবাসীদের সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সোসাইটর সাথে জড়িত শীর্ষ নেতারা। প্রবাসীদের আইনীসহায়তা দেয়াসহ সব ধরনের সেবা দিতে মনিটরিং সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ঘনিস্ট সূত্র।ইতিমধ্যে কিছু সংগঠন সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করছে,আরো নানা উদ্যোগ নেয়া হবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।
এদিকে আরেক ট্রাভেল ব্যবসায়ী বহুল পরিচিতত ডিজিটাল ওয়ানের পরিচালক বিশিস্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মনে করেন গুজব এবং অপপ্রচার যাতে প্রবাসীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার না করে সে ব্যাপারে সবার উদ্যেগ নিতে হবে । তিনি বলেন রোববারে গ্রীণকার্ডধারী প্রবাসী তার একযাত্রী আমেরিকা ফিরেছেন, তাই আতংকের কিছু নেই। তিনি বলেন এমন গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে যে সিটিজেন যাত্রীরাও আতংকে টিকেট বাতিল করতে চাইছেন। অন্তত ১৪জন যাত্রী ইস্যু করা টিকেট বাতিল করেছেন এমন তথ্য দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন এই অবস্থা চলতে দেয়া যায়না, সবার সমন্বিত চেস্টার মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
জেকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার ট্রাভেল ব্যবসায়ী মোঃ হারুনুর রশীদ মিলন বলেন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এখন বাংলাদেশ প্রবাসীদের মাঝে। ৭ দেশের মুসলমানদের প্রতি নিষেধাজ্ঞার পর ট্রাম্প পাবর্তীতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন এমন কৌতুহল বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। সাতটি পরিবারের সদস্য টিকেট বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এমন তথ্যদিয়ে রশীদ বলেন আর্থিক ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করে পরিবারগুলোকে টিকেট স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গ্রীণকার্ডধারী যাত্রী যারা অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তারা জরুরীভিত্তিতে আমেরিকা ফিরছেন বলে জানান রশীদ আহমদ। প্রবাসীদের মনে সন্দ্হে সংশয় প্রসঙ্গে রশীদ আহমদ বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন পূর্ব বক্তব্য, নির্বাচন পরবর্তী কর্মকান্ড, মুসলিম বিদ্বেসী মনোভাব সবমিলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এখন বাংলাদেশীদের মাঝে লক্ষনীয়।আর এর ফলেই কেউ সিটিজেন হওয়ার পরও সাহস পাচ্ছেননা দেশে যাওয়ার। আবার হজ্বের টিকেট করেও অনেকে যাত্রা বাতিল করছেন। প্রবাসীদের মাঝে বিভ্রান্তি দুরসহ ইতিবাচক পরিবেশ তৈরীর জন্য গণমাধ্যম,কমিউনিটিনেতৃবৃন্দ,আইনজ্ঞসহ সচেতন সকল মহলকে ভুমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এস্টোরিয়ার বিশিস্ট ব্যবসায়ী প্রাইম ব্রোকারেজের পরিচালক আবুল কালাম বাংলাপত্রিকাকে বলেন প্রবাসীরা কোন আস্থা রাখতে পারছেননা। ফলে সবকিছু স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ফিরছেন তাদের প্রতিটা মুহুর্ত কাটছে উদ্বেগের মাঝে। গ্রীনকার্ডধারীরা দেশে যাওয়ার আতংকে শুধু নয় কানাডায় যেতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের সাথে আলাপ করে প্রবাসীদের সেবা দেয়ার জন্য কমিউনিটির সংগঠনের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।