সংযুক্ত অারব অামিরাতের এক ব্যবসায়িক নক্ষত্রের নাম অদুল কান্তি চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৪:৩৯,অপরাহ্ন ১৩ মার্চ ২০১৭ | সংবাদটি ৮৯৮০ বার পঠিত
-
শিবলী আল সাদিক, দুবাই
বিন্দু থেকে সিন্দু হওয়ার অনেক গল্প অামরা শুনেছি- পড়েছি। কিন্তু মানবতার জন্য নিজেকে এতো বেশী উজাড় প্রাণ কেউ করেছে তা দেখার বা শুনার তেমন বেশী সুযোগ তৈরী হয়নি। অদুল কান্তি চৌধুরীর জীবন কর্ম না দেখলে হয়ত তা না দেখায় রয়ে যেত। অাজ কাল যেখানে বিত্তবানরা নিজেদের আখের গোছাতে বা সম্পদ যা করেছে তাকে দ্বিগুন করতে ব্যস্ত, সেখানে অদুল কান্তি চৌধুরী নিজ সম্পদের অর্ধেক ব্যায় করেন মানবতার কল্যাণে। নিরব, নির্লোভ, প্রচার বিমূখ এই মানুষটি প্রতিনিয় ভাবেন মানুষ নিয়ে। কিভাবে সমাজ সেবা করা যায়, দূর্দশা গ্রস্থ মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায় এই চিন্তা সকল সময় কাজ করেন অদুল কান্তি চৌধুরীর মাঝে। মানবতার কল্যাণ যেমন অদুল চৌধুরীকে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই ও সম্মানের শীর্ষ অাসনে বসিয়েছে, তেমনি তার ব্যবসায়িক সফলতা অামিরাতে শীর্ষ ক’জন প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ির মধ্যে অন্যতম সৃজনশীল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিণত করেছে। ব্যবসায়িক ম্যাগনেট হিসেবে অদুল কান্তি চৌধুরী বিশ্বের নামী দামী ব্রান্ডিং কোম্পানী গুলোর কাছে অাজ একটি পরিচিত নাম। অার সফলতার গল্পের পেছনে গত ৩০ বছরের শ্রম, ঘাম, সাধনা,বিষাদ, বেদনা, অনুপ্রেরনা, সাহস, প্রতিবন্দকতা,এগিয়ে যাওয়ার অনেক কথা লুকিয়ে অাছে।

মেয়ের সাথে
অদুল কান্তি চৌধুরী ১৯৮৫ ইংরেজীর ২১ নভেম্বর জীবিকার তাগিদে অামিরাতে অাসেন। চট্টগ্রামের বোয়ালখলী উপজেলার জৈষ্ঠপুরা গ্রামের ক্ষুদিরাম চৌধুরী ও নিরুবালা চৌধুরীর সন্তান অদুল চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। তাই পড়াশুনা করেন ইলেক্ট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু পরিবারের চাহিদার যোগান দিতে এবং নিজের প্রয়োজনীয়তা পূরনে অদূল চৌধুরী অর্থ অাহরনে ছুটে আসেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ অামিরাতে। ১৯৮৭ সালের ২১ নভেম্বর তিনি শারজার দায়িদে অাসেন এবং শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। সততা নিষ্ঠা, ও পরিশ্রম অদূল চৌধুরীকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে ধাবিত করে।
২০০০ সালে অাসে সে সু সময়। তিনি কাঙ্খিত স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেন। তার প্রথম প্রতিষ্ঠানের নাম অাল মোহারিক পাম্পস ট্রেডিং। তার পর অার ফিরে তাকাতে হয়নি অদূল কান্তি চৌধুরীকে। প্রতিষ্টা করেন(২) অাল মোহারিক ড্রিলিং ট্রেডিং,( ৩)অাল মোহারিক পাম্পস্ ট্রেডিং অাল মাদাম,(৪)অাল মোহারিক পাম্পস ট্রেডিং অাল অাইন (৫)অাল মোহারিক পাম্পস ট্রেডিং রাস অাল খাইমা,(৬)অাল মোহারিক পাম্পস ট্রেডিং অাল দাইদ সানাইয়া,(৭)অাল মোহারিক ইলেক্ট্রিক এন্ড সেনেটারী ওয়ার ট্রেডিং এল এল সি অাল দাইদ, (৮)অাল মোহারিক ওয়াটার ওযেল ড্রিলিং কোম্পানী অাল দাইদ সারজা,(৯)নামিন অাল জুনোর ওয়াটার ওয়েল ট্রেডিং সারজা,( ১০)অাল মোহারিক ওয়াটার ওয়েল ড্রিলিং কোম্পানি ফুজিরা।অদূল চৌধুরীর এসব কোম্পানী অাজ ইউ এ ইতে সফলতার শীর্ষে থেকে ব্রেন্ডিং কোম্পানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এসব কোম্পানীর বার্ষিক টার্নওভার ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে কোম্পানীর সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানান। বাংলাদেশী মালিক অদূল চৌধুরীর এই কোম্পানী গুলো বিশ্ববিখ্যাত মোটর পাম্পস ফ্রেংকলিন সার মারসিবল, পেডরোলা, স্পোরনি, সাইয়ের, লোয়ারা পাম্পের মত ব্রেন্ডিং পাম্পস্ কোম্পানী গুলোর মধ্যপ্রাচ্য ও অাফ্রিকা অঞ্চলের সোল্ড এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সদালাপি প্রচার বিমূখ অদুল চৌধুরীর কর্মকান্ড ও তার ব্যবসায়িক পরিধি তাকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিজনেস ম্যাগনেট হিসেবে পরিচিতি দান করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের স্বনামধন্য বাংলাদেশী মালিকানাধীন পারফিউম কোম্পানী অাল হারামাইনের পর, ইলেক্টিক পাম্প জগতে অাল মোহারিক কোম্পানীর নাম গ্রহকদের কাছে অতি পরিচিত। উচ্ছ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যবসায়ি হওয়া সত্বেও নিজেকে কখনো প্রকাশ করতে দেখা যায়নি অদূল কান্তি চৌধুরীকে। বরং নিরবে নিভৃতে অকাতরে দান করে গেছেন এই উদার প্রাণ প্রবাসি অদূল চৌধুরী। তার অার্থিক সহয়তায় গড়া প্রতিষ্টানের তালিকা দেখলে বুঝা যায় কতটা উদার প্রাণ হলে এসব করা সম্ভব। খবর নিয়ে জানা যায়, অদূল চৌধুরী অার্থিক সহয়তায় গড়ে উঠা প্রতিষ্টানের সংখ্যা অনেক, যেহেতু অদূল চৌধুরী নিরব দানশীল ব্যক্তি তাই তার গড়া প্রতিষ্টানের হিসেব নির্ণয় করাও একটু কঠিন। তারপরেও যে প্রতিষ্টান তার প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে তা হলো চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নিজগ্রাম জৈষ্টপুরায় মায়ের নামে নিরোবালা চৌধুরী একাডেমী,বোয়ালখালী মুক্তাগাছা স্কুলে নিরোবালা চৌধুরী অডিটোরিয়াম, কধুরখিল হাই স্কুলের হল রোম,শাকপূরা স্কুলের কম্পিটার রোম সহ অসংখ্য স্কুলে অদূল চৌধুরীর অার্থিক অনুদান রয়েছে।
তাছাড়া বোয়ালখালী এলাকার অসংখ্য এতিম খানা, অনাথ অাশ্রম, মসজিদ, মন্দির,ব্রিজ কার্লভাটের কাজ নিজ অনুদানে করেছেন অদূল চৌধুরী। এলাকার অসংখ্য অসহায় মেয়ের বিয়ে,ছেলের বিয়ে, বৃদ্ধাশ্রমে অদূল চৌধুরীর সহয়তা অবর্ননীয়।এলাকা এবং এলাকার বাইরে অদূল চৌধুরী গড়ে তুলেছেন অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্টান। খাগছড়িতে ছোট গাছবান শীব মন্দির, মেধস মনি অাশ্রমের কামাক্ষা মন্দির,কধুরখিল মিলন মন্দিরে দোতলা কৃষ্ণ মন্দির,বলোয়ার দীঘিরপাড় শীব মন্দির,নেহালপুর বাসুদেব যোগ অাশ্রমে অনাথালয়,শীতাকুন্ড শংকরহাটে অতিথি নিবাস ভবন,কালিছড়ি কালি মন্দির,ভান্ডারজুরি রাধা বিগ্রহ মন্দির সহ অসংখ্য ধর্মীয় প্র্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে অদূল চৌধুরী নিজের অর্থ ব্যায় করে।
নিজ ধর্মের প্রতি অানুগত্ব রেখে পর ধর্মের প্রতিও সম্মান জানাতে কখনো দ্বিধাবোদ করেনি অদূল চৌধুরী।গোলাপকানো বাজার এতিমখানা বিভিন্ন মসজিদের পাকা ঘাট ও কবরস্থানের দেয়াল নির্মান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে থেকে সহয়তা করেছেন এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষটি।শুধু মুসলিম নয় বৌদ্ধ মন্দিরে অনুদান সহ নানা দূর্দশা গ্রস্থ মানুষের ঘর বাড়ি নির্মানে এই সাদা মনের মানুষটির উদার হস্থ সব সময় প্রসারিত করেছে।অদূল চৌধুরী ১৯৯৪ সনে অনিতা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে অাবদ্ধ হন। অনিতা চৌধুরী পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। অদূল চৌধুরীর ধীরে ধীরে এপর্যায়ে অাসার পেছনে সকল অনুপেরনা ছিল অনিতা চৌধুরীর। ব্যবসায়ীক পরিধি বিশাল হলেও অদূল চৌধুরী ও অনিতার ছোট্ট সংসার। এক মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে তাদের গোছানো সংসার।বড় মেয়ে অংকিতা চৌধুরী লন্ডনের বার্মিনহাম সিটি ইউনিভার্সিটিতে এল এল বি নিয়ে পড়াশুনা করছেন।ছেলে অংকোশ চৌধুরী পড়াশুনা করছেন সারজা বিক্টোরিয়া ইংলিশ স্কুলে। এ প্রতিবেদকের সাথে অালাপ কালে অদূল চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা বলেন একটি সময় ছিল সংকটময় মূহুর্ত কাটিয়েছি অামরা।তবে ধর্য্য হারায়নি।সংকট উত্তরণের চেষ্টায় এগিয়ে চলেছি।সফল হয়েছি।তাই মানুষের কষ্ট কি তা অামরা বুঝি।তাই যেভাবে পাড়ি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। অদূল চৌধুরী বলেন নিজের কাছে কোন উচ্ছাবিলাসিতা নায়। অামি যা উপার্জন করি তা প্রয়োজন অনুযায়ী কিছুটা নিজের জন্য রেখে বাকিটা দূর্দশাগ্রস্থ মানুষও সমাজিক কাজ, শিক্ষাখাতের জন্য ব্যায় করি।তিনি প্রবাসীদের সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করে দেশ প্রেমে উদ্বোদ্ধ হওয়ার অাহবান জানান।সমাজে অদূল চৌধুরীর মত মহৎপ্রান মানুষের জন্মহোক যুগে এটাই সকলের প্রত্যাশা।