যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বর্ডারে যা ঘটে থাকে সচরাচর
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫২:৫০,অপরাহ্ন ২৩ এপ্রিল ২০১৭ | সংবাদটি ৭১৭ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার গার্ড কি আপনার ধর্ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করতে পারেন? অথবা আপনার সেলফোন বা সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট চেক করার অধিকার?
প্রবাসের নিউজ ডেস্ক : কানাডায় অনেক বাংলাদেশী আছেন যারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যান আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বা চাকরীর কারণে। এদের কেউ কেউ যান আকাশ পথে। আবার কেউ কেউ যান সড়ক পথে। যাওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার গার্ডদের মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেকের অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয় বর্ডারে। কারো কারো অভিজ্ঞতা আবার হয় অনেক তিক্ততাময়। অথবা বলা যায় অবমাননাকর অভিজ্ঞতা। কিন্তু তারপরও যেতে হয় ঐ দেশটিতে বিশেষ করে যাদের ভাই-বোন বা অন্যকোন নিকটআত্মীয় আছেন। কিংবা যারা কানাডায় পরিবার রেখে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরী করতে যান।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির বর্ডারে দেখা দিয়েছে নতুন এক উপদ্রপ যাকে ‘ট্রাম্পাদোপ্রব’ হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। তিনি ক্ষমতায় এসেই এক নির্বাহী আদেশ জারী করে বসেন যাতে বলা হয় ৭টি মুসলিম দেশের নাগরিকগণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই আদেশ জারীর পর দিন কয়েক যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে দেখা দেয় এক মহা অরাজকতা। এমনকি অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রগামী মুসলিম যাত্রীদের নিয়ে দেখা দেয় এই অরাজকতা। কানাডায় অবস্থানরত ঐ ৭টি দেশের নাগরিকেরাও ছিলেন উৎকণ্ঠায়। অন্যান্য মুসলিম দেশের নাগরিকেরাও উৎকণ্ঠায় ছিলেন এই কারণে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন কি না।
পরে অবশ্য জানানো হয় যে, যারা কানাডার অধিবাসী তারা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন ঐ ৭ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও। অন্যদিকে মার্কিন আদালতের এক আদেশের কারণে ট্রাম্পের ঐ নির্বাহী আদেশের কার্যকারিতা রহিত হয়ে যায় পরের সপ্তাহেই। পরে ট্রাম্প নতুন করে আবার এক আদেশ জারী করেন। কিন্তু সেটিও আদলতের আদেশে রহিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটেনের এক নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তাকে যুক্তরাষ্ট্রগামী এক প্লেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। কেন নামিয়ে দেয়া হয় তার ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রী বিশেষ করে মুসলিম যাত্রীদের সঙ্গে অনেক সময়ই এমন সব আচরণ করা হয় যা শোভনতার মাত্রাকে তো ছাড়িয়ে যায়ই, কখনো কখনো তা চরম অবমাননাকরও হয়ে দাড়ায় যাত্রীদের জন্য। সম্প্রতি মুসলিম যাত্রীদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার গার্ডদের ঔৎসুক্য যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে নুতন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কানাডিয়ান নাগরিকদের কি কি অধিকার আছে যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বার্ডার গার্ডদের সম্মুখীন হন।
সম্প্রতি কানাডার সিবিসি নিউজ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঐ প্রতিবেদন তৈরী করতে গিয়ে সিবিসি নিউজের পক্ষ থেকে সিভিল লিবার্টিজ এ্যাডভোকেট এবং ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি লইয়ারের কাছে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। সিবিসির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় যাত্রীদের কি কি অধিকার আছে। ইউএস বর্ডার এজেন্সির ওয়েবসাইট থেকেও কিছু প্রশ্নের উত্তর নেয়া হয়।
যারা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত যাতায়ত করেন তাদের জন্য এখানে সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো তুলে ধরা হলো :
প্রশ্ন : কোন কানাডিয়ান যাত্রী যখন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করার সময় একজন ইউএস কাস্টম অফিসারের মুখমুখি হন তখন ঐ যাত্রীর কি কি অধিকার থাকে?
উত্তর : সাধারণভাবে কাস্টম অফিসারের ক্ষমতা অনেক। কোন যাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন কি না তা নির্ভর করে কাস্টম অফিসারের সিদ্ধান্তের উপর। আপনি যখন সীমান্ত অতিক্রম করতে যান তখন দুই দেশের আদালতই মনে করেন যে আপনার অধিকারের পরিধি অনেক সংকীর্ণ হয়ে আসে। যেমন, সীমান্তে কোন পুলিশ কর্মকর্তা যদি আপনাকে সার্চ করতে চান তখন তাতে আপনার কোন আপত্তি করা চলবে না। তারা আপনার গাড়ি, মালপত্র এমনকি আপনার দেহও তল্লাসী করে দেখতে পারেন। যদি সন্দেহ ঘনীভূত হয় তবে গাড়ির যন্ত্রপাতি খুলেও চেক করতে পারেন। এ কথা বলেন বিসি সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশেন এর এ্যাকটিং লিটিগেশন ডিরেক্টর কেইলি ডিপোমা।
ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সীর ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা আছে Ñ ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এর প্রতিটি চেক পোস্টেই স্বতন্ত্র। এখানে কর্মরত অফিসারগণ বেশ কিছু বিষয় দেখেন একজন যাত্রীকে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আগে। এর মধ্যে আছে যাত্রীর সাক্ষাৎকার, ডকুমেন্টস চেক, রেকর্ড চেক এবং কখনো কখনো যাত্রীর সঙ্গে থাকা লাগেজ চেক।
যাত্রীদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে এটি প্রমাণ করার যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য।
প্রশ্ন : বর্ডারে নিযুক্ত কোন কর্মকর্তার কি অধিকার আছে আপনার ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করার?
উত্তর : হ্যা, ইউএস বর্ডারে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের অধিকার আছে যে কোন বিষয়েই আপনাকে প্রশ্ন করার। তারা আপনার ধর্ম নিয়েও প্রশ্ন করতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাস বা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনার
সম্পৃক্ততা আছে কি না। বিষয়টি আপতদৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হলেও কারো প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন না করে বর্ডার কর্মকর্তাদের জানার অধিকারটুকু আছে আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী। এ কথা বলেন বিসি সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশেন এর এ্যাকটিং লিটিগেশন ডিরেক্টর কেইলি ডিপোমা।
অন্যদিকে কানাডিয়ান এসোসিয়েশেন অব রিফুউজি লইয়ার্স এর প্রেসিডেন্ট মিটচেল গোল্ডবার্গ বলেন, যদি একজন ইউএস বর্ডার গার্ড মনে করেন কোন যাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ওভারস্টে করবেন, অবৈধভাবে চাকুরী করবেন, তার ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে, অথবা ঐ যাত্রী কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে তবে তাকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার সম্পূর্ণ অধিকারই আছে তার।
কিন্তু কানাডার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির কোন কর্মকর্তা যদি ধর্ম বিশ্বাসের কারণে কাউকে কানাডায় প্রবেশের অনুমতি না দেন তবে তার ঐ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কানাডীয় আদালতের আশ্রয় নেয়া যাবে।
অবশ্য ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এর কর্মকর্তা ডেভিড লং বলেন, এই সংস্থাটি কারো ধর্ম বিশ্বাস, এথনিসিটি বা সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনের কারণে কোন বৈষম্য প্রদর্শন করে না যখন কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চান।
প্রশ্ন : ইউএস বর্ডার গার্ডদের কি অধিকার আছে আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনের পার্সওযার্ড চাওয়া এবং সেই ফোন পরীক্ষা করে দেখার?
উত্তর : বিসি সিভিল লিবার্টিস এসোসিয়েশেন এর এ্যাকটিং লিটিগেশন ডিরেক্টর কেইলি ডিপোমা বলেন, ইউএস বর্ডার গার্ডের কোন সদস্য পাসওয়ার্ড চাইলে ভ্রমণকারী তা দিতে অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু কেউ যদি এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করেন তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি নাও পেতে পারেন।
কানাডিয়ান এসোসিয়েশেন অব রিফুউজি লইয়ার্স এর প্রেসিডেন্ট মিটচেল গোল্ডবার্গ বলেন, কোন ইউএস গার্ড যদি ন্যায্যতা আছে বলে মনে করেন তবে তার অধিকার আছে স্মার্ট ফোন চেক করে দেখার। তারা আপনার ফোন বাজেয়াপ্তও করতে পারেন। তবে বৈষম্যমূলক কারণে এ কাজটি করার অধিকার রাখেন না ইউএস বর্ডার কর্মকর্তাগন।
প্রশ্ন : ইউএস বর্ডার গার্ডগণ কি সোশ্যাল মিডিয়া এবং ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য আপনার উপর জোর খাটাতে পারে?
উত্তর : না, তারা সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড চাইতে পারেন না। নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তবে যদি আপনি আপনার স্মার্ট ফোনের পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন তবে বর্ডার গার্ডরা আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রবেশ করতে পারেন আপনার অজান্তেই।
নিউ ইয়র্ক টাইম এর ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্ডার এজেন্টরা আপনার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডও চাইতে পারেন না। তবে তারা আপনাকে স্বেচ্ছায় তা দেয়ার জন্য বলতে পারেন। না দিলে তারা আপনার ভ্রমণকে অস্বস্তিকর করে তুলতে পারেন। আপনার ল্যাপটপ সাময়িক সময়ের জন্য আটক করতে পারেন।