লাশ মিলল হোসনা ও তার মায়ের : ব্রিটিশ মিডিয়ায় গল্প সাংবাদিকতা ও কিছু প্রশ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪২:৩২,অপরাহ্ন ২৯ জুন ২০১৭ | সংবাদটি ১২৫ বার পঠিত
-
মুনজের অাহমদ চৌধুরী, লন্ডন
হোসনা অার তারঁ পরিবারের পাচঁ সদস্যকে যে অার জীবিত উদ্ধার করার অাশা নেই, তা অামিই লিখেছি দু সপ্তাহ অাগের লেখায়। অগ্নিকান্ডের ক’দিন পর ভবনটি থেকে একটি পরিবার জীবিত উদ্ধার হয়। হোসনাদের নিয়ে তবুও মনের কোনে অনেকগুলো ‘যদি’ অার ‘তবু’ র বৃত্তবন্দি ক্ষীণ অাশায় তবু বুক বাধিঁ। অাশায় অধীর হন স্বজনরা। হোসনা অার তারঁ মা রাবেয়া বেগমের লাশ সনাক্তের মধ্য দিয়ে সে অাশাটুকুরও সমাধি ঘটল।
লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াল অগ্নিকান্ডের দু সপ্তাহ পর গতকাল মিলল হোসনা ও তার মায়ের লাশের খোঁজ।তবে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিখোঁজ বাংলাদেশী বংশোব্দুত ব্রিটিশ নাগরিক কমরু মিয়ার পরিবারের পাচঁ সদস্যের মধ্যে তিনজনের লাশের কোন খোজঁ এখনও পাওয়া যায় নি। পাওয়া গেছে ২৩ বছর বয়সী হোসনা বেগম অার তার মায়ের লাশ। এর মধ্যে ২৩ বছর বয়সী হোসনা’র লাশ পাওয়া যায় ১৭ তলার লিফটের পাশে। তার মার ৬৪ বছর বয়সী রাবেয়া বেগমকেও একই ফ্লোরে নিজেদের ফ্লাটে পাওয়া যায়। ডেন্টাল রেকর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে মা মেয়ের লাশ সনাক্ত করা হয় বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের উদ্বৃতি দিয়ে পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদককে জানান। তবে কিছু অানুসাঙ্গিকতা শেষ না হওয়ায় হোসনা ও তার মায়ের জানাজার সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। জানাজা শেষে লন্ডনে ই তাদের দাফন হবে বলে,পরিবারসুত্র জানায়। জানাজা ইষ্ট লন্ডন মসজিদে অনুষ্টানে পরিবারের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন স্বজনরা।এ পরিবারের অপর তিন সদস্যর লাশ এখনো পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ মিডিয়ায় গল্প সাংবাদিকতা ও কিছু প্রশ্ন:
এদিকে, মা মেয়ের লাশ পাওয়া গেলেও বাবা ও দু ছেলের লাশ সনাক্ত না হওয়া ও ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে মা মেয়ের লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে কিছু ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়ার গল্প সাংবাদিকতার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর অাগে ‘৯০ বছরের অতীশিপর বৃদ্ধ বাবা কমরু মিয়াকে নীচে নামানো সম্ভব না হওয়ায় দেড় ঘন্টা সময় পেয়েও ভবন থেকে বেরিয়ে অাসার চেষ্টা করেননি হোসনা,তার মা ও দু ভাই” এমন অাবেগের গল্পময় অার যুক্তিসল্পতায় পুর্ন রির্পোট প্রকাশ করে কিছু ইংলিশ দৈনিক। পরিবারটির বাকী সব সদস্য কমরু মিয়াকে রেখে নিজেদের জীবন বাঁচানোর কোন চেষ্টা করেননি বলেও উল্লেখ করা হয় রির্পোটগুলোতে। অার অাদৌ সেটি ঘটলে পাচঁজনের লাশ নিজেদের ফ্লাটে থাববার কথা। সেখানে হোসনার লাশ লিফটের পাশে,অার মায়ের লাশ নিজেদের ফ্লাটে মিলল কি করে? বাবা অার দুভাইয়ের লাশও মিলল না সেস্থানে। যেখানে তাদের শিরোনাম ছিল ‘একই সাথে মরতে মৃত্যুকে বরন’।
অনেকে বলছেন, এত প্রানের হানি অার দায়িত্বশীলদের অবহেলা অাড়াল করতে ই এমন রির্পোট প্রকাশ করে পাঠকের দৃষ্টি সরাতে চেয়েছিল তারা।
অথচ,সুযোগ অার দেড় ঘন্টার মত সময় পেলে দুজন তরুন পুত্র সহ পরিবারের অন্য চার সদস্যের পক্ষে কমরু মিয়াকে কাধেঁ করে হলেও বয়ে নামানো সেক্ষেত্রে অসম্ভব হত না,এমন মন্তব্য অনেকের।
উল্লেখ্য,ভবনের ১৭ তলার ১৪৪ নাম্বার ফ্লাটে মা বাবা অার ভাইদের সাথে থাকতেন হোসনা বেগম।
কমরু মিয়াদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্টান সেন্ট্রাল লন্ডনের বেঙ্গল রেষ্টুরেন্ট। প্রায় ৯০ বছর বয়সী কমরু মিয়া অবসর জীবন যাপন করছিলেন। তাঁদের মূল বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খৈসাউড়া গ্রামে।
এদিকে,অাগুনে নিখোঁজ থাকা অনেকের লাশ পেতে চলতি বছর শেষেও না মেলার অাশংকার কথা গতকাল জানিয়েছেন মেট্রপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফিওনা মেকরম্যাক। মৃতের প্রকৃত সংখ্যাও কখনো নিশ্চিত না হবার শংকার কথা ব্যক্ত করেছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
সবশেষ পরিস্থিতিঃ
জানা গেছে,অার যেসব লাশ সনাক্ত হবে সেটি কোন পরিবারের সেটি নিশ্চিত হওয়া গেলেও সমবয়সী একাধিক ব্যাক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া দুরুহ হবে। কারন, মৃত ব্যাক্তিদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার মত ব্যবহার্যগুলোও পুড়ে গেছে।
গত ১৪ জুনের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। নিহতদের বেশিরভাগই ২৩ টি ফ্ল্যাটের বলে জানা গেছে।
পুলিশ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের থেকে এ ঘটনা সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছে। অনুসন্ধানে সাত জন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি থেকে জানা যায়, ছয় মাস বয়সী এক মৃত শিশুটিকে পাওয়া গেছে মৃত মায়ের হাত ধরা অবস্থায়।
শিশুটির মা ফারাহ হামদানকে ১৯ ও ২০ তলার মধ্যখানে পাওয়া যায় । এসময় তার হাতেই ছিল তার ৬মাস বয়সী হতভাগ্য শিশু লিনা। একই সাথে লিনার ৮ বছর বয়সী বোন মালিক কে ২০ তলা থেকে উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তবে, জীবিতরা ও নিহতদের স্বজনরা এ ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।মেট্রপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফিওনা মেকরম্যাক বলেছেন,
আমরা নিশ্চিত যে ৮০ জন মানুষ হয়তো মারা গেছেন নয়তো নিখোঁজ আছেন। তবে আমরা ধারণা করছি যে তারা মারা গেছেন।
উদ্বিগ্ন বাংলাদেশীরাঃ
লন্ডনে দিন কয়েকের ব্যবধানে তিনদফায় ভবনে অগ্নিকান্ড ও কয়েক দফায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ব্রিটেনে বিশেষত অভিবাসী কমিউনিটির মধ্যে এখনও উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটছে না।
বিশেষত জঙ্গি হামলার জের ধরে বিলেতে মুসলমানদের উপর হেইট ক্রাইম বা বর্নবাদী হামলা বেড়েছে অাশংকাজনক ভাবে। গত সপ্তাহে বাঙ্গালী অধ্যুষিত পুর্ব লন্ডনে চলন্ত গাড়ীতে ছোড়া এসিডে ঝলছে গেছে রিসাম খান নামে একুশ বছর বয়সী তরুনীর মুখ। ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে বর্নবাদী হামলার ঘটনা স্বীকার করেছে পুলিশও। বাংলাদেশী কমিউনিটিও স্বভাবতই উদ্বিগ্ন।