খোলাচিঠি: প্রবাসী সাংবাদিকদের বেতন ভাতা প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১০:২৪,অপরাহ্ন ০৯ আগস্ট ২০১৭ | সংবাদটি ৭৫৬ বার পঠিত
-
লুৎফুর রহমান
০১.
মাননীয় অর্থমন্ত্রী! আমি যখন আপনাকে এ চিঠি লিখছি তখন সারাদেশের মানুষ সাংবাদিকদের নিয়ে হাসছে। ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে ফেসবুক আঙিনা। আপনার বলা ‘রাবিশ’ শব্দে এতো মাতামাতি। অবশ্য আপনি সবসময় এমন শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্থ। আমার ভুল না হলে সেই একাত্তরে আপনিও পরদেশে চাকুরীতে ছিলেন। সুতরাং পরবাসে আমরা যারা কামলা মানুষ আমাদের কাছে এসব ‘রাবিশ’ শব্দ খুব চেনা। এমনকি আমাদের একা নয় আমাদের জাতিকেও ‘হারামি’ ‘কাছরা’ ‘মিন্নি মিন্নি’ শব্দ বলা হয়। আমাদের বুকের গহিনে থাকা দেশপ্রেম জেগে ওঠে তখন। আমরা প্রতিবাদে জ্বলে ওঠি। বলতে পারেন আমরা এখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। আর হ্যাঁ এই ভাল লাগাই আমাদের পথচলার শক্তি।
-
আপনাকে যখন চিঠিটা লিখছি তখন অন্যকাজকে ফাঁকি দিয়ে লিখছি। পরদেশে কাম করে ভাত খাওয়া মানুষ আমরা। কামলা মানুষ। ইটের পরে ইট বসিয়ে ইমারত বানিয়ে দেয়া লোক। নিজের কাজই আগে করতে হয় তার মধ্যেও আমরা আমাদের বাংলাদেশী পরবাসীদের সুখ দুখের কথা আপনাদের জানাই। মানুষ যখন ছুটির দিনে বউ বাচ্চা নিয়ে পরবাসেও ঘুরে বেড়ায় আমরা তখন ক্যামেরা নিয়ে সংবাদের পেছনে ছুটি। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্ত শরীর যখন বিছানাতে শুতে চায় আমরা তখনো কোন সংবাদের পেছনে ছুটি। এমনকি দূতাবাস, বাংলাদেশ বিমান, জনতা ব্যাংক সহ রাষ্ট্রীয় নানা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবাসীরা যখন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় আমাদের কাছে তাদের কষ্টকথা জানান। আমরা সেটা যথাসাধ্য মতো তুলে ধরি। আপনারা তখন অনিয়ম জানতে পারেন।
কষ্টের কথা বাদ দিলাম। আমরা এসব করতে গিয়ে পকেটের টাকা খরচ হয়। আমরা এখানে মূলত এসেছি নিজের পরিবারকে জীবনের নিরাপত্তা দিতে। আমার পকেটের টাকায় ছেলের জন্য দুধ কেনা হতো হয়তো। আমার ছেঁড়া জুতো বদল করতে পারতাম কিন্তু তা না করে দেশের প্রতি দায়বোধ থেকে আমরা তা করে থাকি। এতেও শেষ নয়। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশী কমিউনিটি আমাদের যেমন সহযোগি তেমনি গোটা কয়েক মানুষ ওত পেতে থাকে আমাদের খুঁত ধরতে। আমরা কোন নিউজ না করলে বলবে এটা করো নি কেন। আবার করতে গিয়ে উনার বিপক্ষে গেলে আমরা কোন গোষ্ঠির দালাল হয়ে যাই। এসব হজম করতে করতে আমরা অভ্যস্থ। এতে কষ্ট পাইনা মাননীয় মন্ত্রী। কিন্তু কষ্ট পাই আপনাদের মতো দায়িত্বশীল মানুষদের এমন কথায়। মাননীয় মন্ত্রী, আমরা সংবাদ বানাই না। সংবাদ পরিবেশন করি। আপনাদের কোন মন্ত্রী পরবোসে এসে কিছু বলে গেলে আমরা সেটা প্রচার আর প্রকাশ করি কিন্তু সেখানেও দায় আমাদের ঘাড়ে আসে। মানুষ সংবাদ পরিবেশন আর সংবাদ বানানোর পার্থক্যটাও বুঝে না।
০২.
মাননীয় তথ্যমন্ত্রী! আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বাস করা কয়েকজন রেমিটেন্স এবং শব্দ সৈনিক। দেশের দেড় কোটি প্রবাসীর মধ্যে আমরাও কয়েকজন। আমরা শরীরের ঘাম ঝরিয়ে পরিবার ও দেশের কল্যাণে প্রতিনিয়ত পথ চলছি। এই চলা শেষ নয় এর বাইরেও আছে আমাদের অন্য কাজ। সেটি হচ্ছে প্রবাসী জনগোষ্ঠির সুখ দুখের কথা তুলে ধরতে আমরা গণমাধ্যমের কর্মী। প্রবাসে এ কাজ মোটেও সহজ না। তবু এ কঠিনেরে আমরা ভালবাসি দায়বোধ থেকে। দেশ ও প্রবাসীর কল্যাণ করার জন্য। প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হয়। সারাদিনের মূল কাজ শেষ করে আমরা বাড়তি কাজ হিসেবে কমিউনিটি আর রেমিটেন্সযোদ্ধাদের খবর পরিবেশন করি। আমাদের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারেন তাদের খবর। এ কাজ করতে হয় যে দেশে আছি সে দেশের আইনকে শ্রদ্ধা করে। করতে হয় নিজের সাাথে যুদ্ধ করে। একমাত্র এই কষ্ট একজন প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বুঝবেন না। সারাদিনের কাজের পর মানুষ যখন বিশ্রাম করে আমরা ছুটি খবরের পেছনে। এতো প্রতিকূলতায় কাজ করেও আমাদের কোন সম্মানী নেই। কিন্তু গণমাধ্যম ঠিকই আমাদের কাজকে নিজেদের ক্রেডিট নিচ্ছে। আমার জানামতো একাত্তর টিভি, এনটিভি ছাড়া অন্য কোন টেলিভিশন প্রবাসী প্রতিনিধিদের বেতন ভাতা দেয় না। পত্রিকা তো দেয়ই না। বরং নানা এসাইনমেন্ট দিয়ে দৌড়ে রাখে।
-
পরবাসে থাকা সৃজনশীল সংবাদকর্মীর অভাব নেই। যথাযথ সুযোগের অভাবে এরা তাদের কাজের গতি হারাচ্ছেন। এবং সেইসাথে আমাদেরও কিছু হলুদ সহকর্মী আছেন যারা বিতর্কিত করতেছেন এ পেশাকে। আমার মনে হয় ন্যূনতম একটি বেতন ভাতা যদি অন্তত সব টেলিভিশন আর মূল ধারার পত্রিকাগুলো দিতো আপনারা আরো ভাল খবর জানতেন। দূতাবাসের অনিয়ম জানতেন সহজে। যা আপনাদের কানে আজো পৌছায়নি। এ জন্য আপনাদের সুদৃষ্টি কামনা করি।
মন্ত্রী মহোদয়, প্রবাসে যে থাকে তার মাঝে দেশপ্রেম অনেক থাকে। অনেকটা মা থেকে দূরে থাকা সন্তানের মতো। তাই কথাগুলো কোটি প্রবাসীর পক্ষ থেকে বিবেচনা করে এ বিষয়ে যেন দ্রত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আমরা মনেপ্রাণে চাই কাজের সম্মান। সেই সাথে চাই হলুদ সাংবাদিকতার বিদায়। আর এ জন্য যথাযথ সুযোগ প্রধান অন্তরায়। আশাকরি আমাদের এ চিঠি আপনারা ডাস্টবিনে না ফেলে দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন।
————————————————————————————————————————————
লুৎফুর রহমান: বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর এর আরব আমিরাত সংবাদদাতা, নির্বাহি সম্পাদক- প্রবাসের নিউজ ডটকম।