প্রি য় তা রু ণ্য, হ্যা পি নি উ ই য়া র….
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৪:৫৪,অপরাহ্ন ০১ জানুয়ারি ২০১৮ | সংবাদটি ১৩২৪ বার পঠিত
-
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি
ক.
তত্বকথায় বলা হয়ে থাকে এবং আমরা বলতে ভালোবাসি; সময় ও স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না। প্রতিদিন বিনে পয়সার অক্সিজেন নিয়ে যে আমরা বেঁচে আছি ,আমরাও কী কারো জন্যে ‘অপেক্ষা’ করি। নিজের জন্য ‘একান্ত আপন সময়’ কতটুকু-ই দিই বা দিয়েছি!
উৎসব মানুষকে কাছে টানে বলেই দেশে দেশে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে- উৎসব সবাই ভালোবাসি। উৎসব এর দিন- ক্ষণ -নাম উচ্চারিত হলেই মন তার দখিন জানালা খোলে। প্রাণ জুড়ে যায় আগত ভালোবাসা-ভালোলাগার আবহ গন্ধে।
হালের মাইক্রোক্রেডিট ও ভার্চ্যুয়াল ঢেউ-তরঙ্গে চলা সমাজে ‘উৎসব’ আসলেই কী আমাদের মনে আনন্দ দেয়? মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাবার মতো অনুভূতি ছড়িয়ে যায়! শুভেচ্ছার রাশি রাশি বা শুভ কামনার ঢালি আমাদের মনগহীনে আগের মতো আলতো বাতাস দুলিয়ে যায়! মনচিরহরিৎ কি কারো জন্য সৃজন-মননে মৌগন্ধ শুকে?
থ্রিপল ডাবলিউ এর দুনিয়ায় নিজেকে সপে দিতে হয় না। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ভার্চ্যুয়ালপ্রেমে পড়ে ‘সময় ও মন‘ দিয়ে বসতে হয়। এটা দোষের যেমন নয়, এটাকে অস্বীকার করাও বোকামি ছাড়া কিছু নয়। অন্তত এই সময়ে।
সেলফির সাথে অদ্ভূত মুখভঙ্গির ছবির প্রতি আমাদের অগ্রজরা আগ্রহী নয়। বা বিষয়টি তাদের কাছে সেকেলে ভেবেই তারা দূরে আছেন – এই বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট না হলেও ,এটা স্পষ্ট যে, উত্তর প্রজন্ম এই সুযোগে বুড়োদের সামাজিক সঙ্গত্যাগে মোটাদাগে একটি সুযোগ পেয়েছেন বলেই আমার কাছে সচেতন ভাবে মনে হয়।
সুতরাং একই ঘরে বাবা-মা-ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য স্বজনরা থাকলেও এনড্রোেয়ড ফোন-আর ওয়াইফাই কানেকশন আমাদের অতিআধুনিক করে , অতিসামাজিক করে দিয়েছে- এটা হলফ করে বলা যায়। ফলত এই নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন, শুভেচ্ছা রাশি রাশি, অনুভিডিও আদান -প্রদানে আমরা আমাদের প্রতিভা, সামাজিকতা, দায়িত্ববোধ সর্বোপরি নিজেকে উৎসবে রেখে আনন্দযজ্ঞে আছি। এবং নতুন পোশাকে-সাজগোজের সেলফি-গ্রুপছবি গুলো তো স্যোসাল মিডিয়ায় দেখে লাইক- রিএ্যাক্ট (লাভ)-ওয়াও- ছড়াছড়িতে অন্যরাও যে আপ্লুত আছেন ,এই সকল উৎসবে, তা ভালো করে বুঝাও যায়। সামাজিক যোগাযোগের ছবি গুলো –‘ছবি কথা বলে‘ যুক্তির চেয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী এবং আবেদনময়ীও বটে।
আমার কাছে একটি মুখের হাসি ভোরের আলোর মতো। আলতো আভায় সূর্য যেমন পৌষের শীতকে মনভালো করা উপভোগ্য করে তুলে, তেমনি চোখের সামনে যে কোন মানুষের অনাবিল হাসিটাও ঐ ভোরের আলোর মতো আমার মনভালো করে দেয়। সরাসরি অথবা আড়ালে যেখানেই, যেভাবেই দেখি না কেন; আমি মনে মনে ভালো হয়ে ওঠি মানুষের মুখের হাসি দেখলেই।
ইংরেজী নববর্ষ উদযাপন আসলেই এই রকম একটি মনভালো করা আন্তর্জাতিক উৎসব। একটি উৎসব যে কিভাবে আন্তর্জাতিক ভাবে সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ আবেদন রাখতে পারে এবং মানুষ ভালোবেসে দেশে দেশে এর সাথে আত্মিকভাবে মিশে আছে- ইংরেজী নববর্ষ হলো তার অন্যতম উদাহরণ। যা এখন অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিতে অনেক বড় ভাবেই প্রকাশিত।
বাঙালিরা বিশ্বজনীন। আমরাও মেতে আছি এই দিনে। এটাকে বাঁকা চোখে দেখার মতো কোন যুক্তিও আমি দেখিনা ( আমাদের নিজস্ব, গোলাভরা সংস্কৃতির, ‘ নববর্ষ’ তো একান্তই আমাদের গর্বের ধন)।
আমরা উৎসবে মাতি, আনন্দে ভালোলাগায় আপ্লুত, প্রিত হই। সেটা নিয়ে অতিবাড়াবাড়ি বা নাক সিটকানোতে আমি স্পষ্টত নই। তবে, প্রিয় তারুন্য, বাংলাদেশী হিসাবে আপনাদের সাথে অনুভূতিকথা বিনিময় করতে নিশ্চয় দোষের মনে করছি না।
খ.
প্রিয় তারুণ্য, নিউ ইয়ার উৎসব সময়ে একটি কথা স্মরণে দিতে মন চাইছে- আচ্ছা, পাশের বাড়ীর আবুল চাচার ছোট ছেলে নয়নের কথা মনে আছে তো? প্রচণ্ড জ্বরে সে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেনা বলে, গতপরশু আপনার কাছে একশত টাকা চেয়েছিল তার বাবা, নয়নের জন্য ঔষধ কিনবে বলে?
আজ সকালে, আপনার ড্রয়িংরোমটা ভালো করে ধুয়ে-মুছে ,পরিপাটি করে দিয়েছে কাজের বুয়া; নতুন বছরের ভোজন-আড্ডার জন্য; যেভাবে আপনি চেয়েছেন। ভুলে থাকার কথা নয়, তার স্বামী কাজ করতে পারেনা বলে ছোট ছেলেটি ঠোকাই এর কাজ করে। স্কুলে যেতে পারেনি কোন দিন।
দেশে প্রতিদিন গুম- হত্যায় বাবা -মা হারাচ্ছে তাদের প্রিয় সন্তান। ধর্ষিত হচ্ছে হাজারও বোন-প্রিয়তম-ভাবি। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রাণ হারায় শত শত সবুজ তরুণ। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন –কত করিম, ছলিম, ফাতিমা, রহিমা বেনু মালার প্রান যায়। বছরে রাজনৈতিক হত্যায় প্রাণ দেয় হাজার প্রাণ ;যারা এই দেশ বিনির্মাণে স্বপ্ন দেখেছিল তোমার মতো।
প্রিয় তারুণ্য,তুমি যে অগ্রজদের মতো আশংকাবিদ্ধ নয়- এটাও বলতে পারবে না সাহস করে। ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ঘিরে ধরছে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ। অক্টোপাসের মতো গায়ে লেগে আছে দেশবিরোধী , অপসংস্কৃতি, ৫২,৭১ বিরোধী ধূর্তসুশীল।
অবশ্যই মনে আছে-ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগ-ত্যাগের গল্প। লাখো মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাথার গল্প গুলো এখনও তোমার গায়ের লোমকোপ গুলো দাঁড়িয়ে তুলে। এই প্রজন্মের অনেকে এখনও স্কুলে যেতে পারে না, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে।
এখনও তোমার প্রিয় বোন,প্রিয়জন রাস্তায়,বাসে ট্রেনে নিরাপদ নয়। অসংখ্য অনাহারী-অর্ধাহারী স্বজন আমাদের আশপাশে বাসকরে,যারা ‘মানবিক’ বলেই হাত পেতে খাবার চায়না কারো কাছে। বিধবা মা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেনা অর্থাভাবে। এখনও মাইলের পর মাইল জমি পড়ে আছে অনাবাদি। আবার প্রতিদিন ভুমি খেকো গ্রাস করছে, সোনাফলা জমি। ছাপান্ন হাজার মাইলের অনেক হাজার মাইল আছে , এখনও কেউ সবুজ বৃক্ষ বপন করেনি।
প্রিয় তারুন্য, আপনি হাসলেই লাল সবুজ বাংলাদেশ হাসে। আপনি ভালো থাকলেই পত পত করে ওড়া মায়ের আঁচলটি বড় নির্ভর মনে হয়। সাথে বুক ফুলে ওঠে অহংকারে।
তুমি পাশের বাড়ির আবুলের যখন খোঁজ রাখো সুস্থ হয়ে ওঠার, ঘরের বুয়ার ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে তার পাশে দাড়াও, বাংলাদেশ এর আকাশ আনন্দবর্ষায় মাতে। ত্রিশ লাখ শহীদ প্রাণ খুলে হাসে।
প্রিয় তারুণ্য, তুমি যখন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ‘মানবিক’ কাজ করো সব ধর্ম -বর্ণ- গোত্রের তারুণ্য নিয়ে। তোমার সেই সেলফি ছড়িয়ে যায়, ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল ছাপিয়ে দেশে দেশে। তুমি আরেকটি স্বপ্ন হয়ে যাও, মানবিক বাংলাদেশ হয়ে ওঠো।
যে দেশ নয়মাসে একটি দেশ স্বাধীন করতে পারে, সেদেশের তারুণ্য জাগলে, দেশটাকে বিশ্বজনীন মানবিক পরিচয়ও দিতে পারে।
প্রিয় তারুণ্য,হ্যাপি নিউ ইয়ারের পরের দিন, চলো, নিজেকে বদলাই। যারা বদলাতে চায়, তাদের পাশে দাঁড়াই। তুমি দাঁড়ালেই জেগে উঠবে মানবিক। তুমি ডাকলেই সব তারুণ্য হয়ে যাবে হ্যামেলিওন। তুমিই মুক্তিযুদ্ধের অসামপ্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশ।
প্রিয় তারুন্য, এ্যা ভ্যারী হ্যাপী নিউ ইয়ার। মনে রেখো, কাল দেখা হচ্ছে- মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে।
আনোয়ারুল ইসলাম অভি: কবি, সাংবাদিক, লন্ডন।