সৌদির তায়েফ – সৌন্দর্যের লিলাাভুমির কথন
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৫:৪১,অপরাহ্ন ১৭ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৪২৪ বার পঠিত
আজম খান
তায়েফকে বলা হয় সিটি অব রোজেস (City of Roses)! সত্যি তাই! মরু আরবের মধ্যে যেন এক খন্ড সবুজ হৃদপিন্ড! চৌদিকে সবুজ গাছপালা, পুরো শহর বাগানবিলাস, রংগন, ল্যান্টানা, পাম ট্রি, বিভিন্ন রং এর পাতাবাহার জাতীয় অর্নামেন্টাল ট্রি দিয়ে সাজানো! সবুজের সাথে আর্টিফিসিয়াল লাইটিং ও ঝাড়বাতির মিশ্রনে নান্দনিক উপস্থাপনা যেন কোন এক আরব্য রজনীর রুপকথার শহর! সমতল ভূমি থেকে ৬১৬৫ কিঃমিঃ উঁচুতে হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই চমৎকার আবহাওয়া বিরাজ করে। তাইতো একে সৌদি আরবের “আন-অফিসিয়াল সামার ক্যাপিটাল” বলা হয়! গ্ৰীষ্মকালে এই এলাকা মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার দুপাশের রিসোর্ট ও লেইজার এরিয়া গুলো যেন সে কথাই জানান দিচ্ছিল। মক্কা থেকে তায়েফ ৮৭ কিঃমিঃ। তায়েফ শহর থেকে ২৫ কিঃমিঃ দুরের এক খাড়া ও উঁচু পাহাড় দেখিয়ে বললো – আমরা ঐ শহরের উপর উঠবো, এটাই তায়ফ! এই সর্পিলাকার উঁচু-নিচু রাস্তা পাড়ি দেওয়ার সময় দার্জিলিংয়ের কথা মনে পড়ছিল। খুব চৌকষ ও কৌশলি ড্রাইভিং না জানলে এই পাথুরে পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে এত উঁচু রাস্তায় উঠা হিমালয়ের চুঁড়া পাড়ি দেওয়ার সমান। একদম উঁচু জায়গায় উঠে দেখি বানর ও হনুমানের আড্ডা বসেছে রাস্তার পাশে। যাদের হাইট ফোবিয়া আছে তারা ব্যতিত বাকিরা চুঁড়া থেকে নিচের সর্পিল দৃশ্যের ছবি তুলতে ভুলবেন না কিন্তু। যারা একটু থ্রিল ও ঝুঁকিহীনভাবে নিচ থেকে উপরে উঠতে চায় তাদের জন্য বিকল্প হিসাবে ক্যাবল কারের ও ব্যবস্থা আছে।
সারা বছর তায়েফে প্রচুর পরিমানে গোলাপ, মধু, আংগুর, ডালিম, মালবেরি জাতীয় ফল উৎপাদিত হয়! রাস্তায় রাস্তায় ফলের ও নার্সারির দোকানগুলো দেখেই অতি সহজে তা বুঝা যাচ্ছিল। এত্ত সুন্দর গোছানো যে ফলের দোকান হতে পারে তা না দেখলে আপনাকে এই লিখনী দিয়ে বুঝানো সত্যি দূঃষ্কর! 
আমরা যাচ্ছিলাম আমাদের শেষ নবীর সেই ল্যান্ডমার্কে যেখানে উনি রক্তাক্ত হয়ে এক পাহাড়ের ঢালে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল। তায়েফবাসীর কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে এসে তিনি প্রত্যাখাত হয়ে রক্তাক্ত হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ! তায়েফ শহরের কাছে সেই জায়গাটি এখনো সেই রকমই আছে, যেখানে সালাত আদায় করেছিলেন তিনি! প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় থাকায় আমরা কিছু ছবি তুলে চলে এলাম আমার স্ত্রী সোমার জন্মস্হান দেখতে! আমার চেয়ে আমাদের ছেলেদুটো ছিল অতি উৎসাহী! শহরের ভিতরের দিকে কিং ফয়সাল হাসপাতাল এর কাছে আসতেই সোমার আব্বু এক প্রকার চিৎকার করেই বলে উঠলো- “এই হাসপাতালের পিছনেই ছিল আমাদের বাসা। আম্মু তোর মনে আছে- এই রাস্তায় তুই সাইকেল চালাতে গিয়ে একবার এক্সিডেন্ট করে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলি”! দেখি সোমার চোখমুখ পুরাই নস্টালজিক – বাল্যবেলার স্মৃতিগুলো চোখেমুখে ঝিলিক দিচ্ছিল। হঠাৎ ছোট ছেলে আয়ান বলে বসলো- “দেখি, আম্মু! কোথায় ব্যাথা পেয়েছিলে”? গুগল বাবাজী আমার কানে কানে বলে দিল- এই তায়েফ উমাইয়া শাসনামলের বিখ্যাত সেনাপতি মোহাম্মদ বিন কাসিমের ও জন্মভূমি! যে ভারত বর্ষের সিন্ধু আক্রমন করে হিন্দু রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ইসলামের ঝান্ডা উড়িয়েছিল।
যোহরের সালাত আদায় করলাম তায়েফ সেন্ট্রাল মসজিদে যেটি কিং ফয়সাল মসজিদ নামেই পরিচিত। বিশালাকার এই মসজিদে ছেলে মেয়েদের নামাজের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া মুসল্লীদের জন্য ফ্রী পানির বোতল (ফ্রীজে বা বক্সে) ও টিস্যূর ব্যবস্হা রয়েছে। ইহা এখানকার অধিকাংশ মসজিদেরই কমন চিত্র যা আমাদের দেশে বিরল। পাকিস্হানী, মিশরিয় বা ইয়েমেনীরা বেশি করে নিয়ে যায় বলে কোথাও লেখা- 1 bottle for 1 person pls! বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ বিন আব্বাস এর সময়কালে প্রতিষ্ঠিত “মসজিদ- এ আব্বাস” দর্শন শেষে আম্মু বললো- আজ লান্চ হবে এখানকার বিখ্যাত রাইস ও ফাহাম ( চিকেনকে ধোঁয়ার উপর লালচেভাবে ফ্রাই করা) দিয়ে। অতঃপর তায়েফ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে রাস্তার পাশের সবুজ ঘাসের কার্পেটের উপর সবাই ক্ষুধা নিবারণ করলাম এই নতুন ম্যানু দিয়ে! ফাহামের স্বাদ ছিল সেইরকম ইয়াম্মী! বিকেল ৪টার দিকে তায়েফ থেকে আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম মক্কার উদ্দেশ্যে! কারন মক্কা থেকে আরো দুরের জেদ্দার রাস্তা ধরতে হবে, অনেক দুরের পথ…! চলবে
আজম খান – ট্রাভেল রাইটার। সৌদি আরব। জানুয়ারি ১৭, ২০২০