আমিরাতের ভিসা এখনো খোলেনি, আদমব্যাপারীদের ফাঁদে পা দেবেন না
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৫:১৩,অপরাহ্ন ১৮ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ৯৭৮২ বার পঠিত
জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি
আবুধাবী,দুবাই, শারজাহ সহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে প্রতিটি বাংলাদেশী অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে,প্রতিটি টেবিল-টক এ এখন আলাপচারিতায় ঘুরে ফিরে আসছে একটিই বিষয় কবে খুলছে আমিরাতে বাংলাদেশের ভিসা? ভিসার দুয়ার রুদ্ধ ২0১২ সালের মধ্য আগস্ট থেকে,যদিও এর কর্ত্পক্ষীয় ঘোষণা আসে আরো দুই মাস পর,অক্টোবরে। ভিসা বন্ধ হওয়ার আগে থেকেই শুরু হয় আমিরাতে বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানীতে কর্মরত বাংলাদেশী নিরাপত্তা কর্মীদের বৃহদাংশের চুক্তি নবায়ন না হওয়া জনিত সংকট। এদিকে কোন আগাম নোটিশ ছাড়া এদেশে বাংলাদেশীদের সব ধরণের ভিসা বন্ধ হওয়ায় সে সময়ে বিশেষ করে বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ কারীদের বিনিয়োগ মাঠে মারা পড়ে। এ সময় নতুন ভিসা ইস্যু না হওয়ার পাশাপাশি রিলিজ ট্রান্সফারও বন্ধ হয়ে পড়ায় একেবারে নাকাল হয়ে পড়ে বাংলাদেশীরা। পেশাজীবী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী পর্যন্ত অন্যুন এক লক্ষ প্রবাসী এ সময় হয় কাজ হারিয়ে ভিসা ট্রান্সফার না থাকায় নিরাশ মনে দেশে ফিরে গেছেন এবং অনেকেই জেল জরিমানার শংকা মাথায় নিয়েও ভিসা ট্রান্সফার চালুর আশায় আমিরাতে রয়ে গেছেন। যদিও ইউএই কর্তৃক বাংলাদেশিদের এমপ্লয়মেন্ট ভিসা না দেয়ার অভিযোগটি উভয় দেশের সরকারই মানতে নারাজ।দুই প্রান্তেরই অফিসিয়াল চ্যানেলে বলা হয় দেশটি কখনো বাংলাদেশীদের ভিসা পুরোপুরি বন্ধ করেনি। আমিরাতে শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশটিতে ‘নিয়মিত কর্মী’ পাঠাতে বাংলাদেশকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে দুই দেশই আশা করছে, শিগগিরই বড় পরিসরে “দক্ষ কর্মী” আমিরাতে যেতে পারবে।
*কেন ছিল এই ভিসা বন্ধঃ
মুনাফাখোর ভিসা ব্যবসায়ীদের কারণে চাহিদার তুলনায় আমিরাতে বাংলাদেশের অতিরিক্ত অদক্ষ শ্রমিকের সমাবেশ ঘটানো, ছোটখাট অপরাধ প্রবণতায় বাংলাদেশীদের ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়া, দেহ ব্যবসা, ভিসা জালিয়াতি, চেক-জালিয়াতি মদ জুয়া,খুন,রাহাজানি,মারপিট,দলাদলি সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মে অংশগ্রহণ রোহিঙ্গা ও যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে সৃষ্ট বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টর এ ভিসা বন্ধের পেছনে কাজ করেছে বলে ওয়াকিফহাল মহলের ধারণা। আমিরাতে বিচারিক প্রতিষ্ঠান কিংবা কারাগার গুলোয় অপরাধ কর্ম ও অপরাধীর তালিকায় শীর্ষ অবস্থান থেকে বাংলাদেশীরা এখন এদেশে ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে আসতে শুরু করেছেন।ইউ এ ই তে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডাঃ মোহাম্মদ ইমরান এদেশের সরকারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে দুতিয়ালি করতে যেয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা জেনেছেন এবং মনে করছেন যে ভিসা খোলার একটা উপযুক্ত পরিবেশ বর্তমানে বিরাজমান। তাই যে কোন সময় ভিসা খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রবাসীদেরকে এদেশের আইন শৃঙ্খলার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নেতিবাচক কোন পরিস্থিতি যাতে আমাদের এ অর্জনকে বিপথগামী না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।কারণ ভিসা পুনরায় চালুর ব্যাপারে আমাদের এ সময়ের কর্মকাণ্ডকে বিবেচনায় আনা হবে। তাই এক্ষেত্রে হতাশার মেঘ কেটেছে কিছুটা।
*কিন্তু লংকা কতো দূর…! ভিসা বন্ধের পূর্বে প্রতিমাসে পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার করে বাংলাদেশী তেল সমৃদ্ধি এই অ্যারাবিয়ান গাল্ফ তীরবর্তী দেশটির শ্রমবাজারের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন।বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনশক্তি রফতানীকারী ও রেমিটন্স প্রেরণকারী দেশ ইউ.এ.ই।ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ট্রেনিং (বি এম ই টি)র মতে কেবল ২0১২ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে যে পরিমাণ বাংলাদেশী বিদেশে গেছেন তার ৪৪ শতাংশই গিয়েছিলেন ইউ.এ.ইতে।সেখানে হঠাৎ করে ভিসা বন্ধে আমিরাতে বাংলাদেশের সবচে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হবার যোগাঢ় হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েে রেমিটেন্স প্রবাহেও।ভিসার অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে অনেকে দেশে ফিরে গেছেন,যার মধ্যে বাজারে প্রচুর দেনা রেখে দেশে পালিয়ে বেঁচেছেন,আর তাতে দিশেহারা হয়েছে বিশেষ করে সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকা প্রান্তিক শ্রমজীবীরা।আমাদের ভিসা বন্ধ থাকার সুবাদে নেপালী ভারতীয় আফ্রিকী এবং পাকিস্তানীরা দ্রুত দখল করে ফেলছে বিভিন্ন পেশায় বাংলাদেশীদের অবস্থান। যা আমাদের ভাবতে হবে। গত ১৬ ও ১৭ অক্টোবর আমিরাতের একটি সরকারী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছেন। আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে আমাদের এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, এ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে। এখন বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানীর ব্যাপারে তাঁরা নতুন করে সমঝোতা স্মারক বা MOU স্বাক্ষর করবেন যাতে লেবার মোবিলিটি,অভিবাসন ব্য়য সহনীয় পর্যায়ে আনা,ন্যুনতম মজুরি পূনঃনির্ধারণ সহ বিভিন্ন ইস্যু থাকতে পারে। আর তার পরপই ভিসার দ্বার অবমুক্ত করা হতে পারে। কিন্তু সেই মহেন্দ্রক্ষণটি কবে? এর উত্তরে সে কুটনৈতিক সূত্র ইতিপূর্বে এ বছরের ডিসেম্বরের দিকে ঈঙ্গিত করেছিলেন এবং তাঁরা এ বিষয়ে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ও যে তাদের গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছিলো সে কথাও বলেছিলেন। ভিসা খোলার ব্যাপারে নতুন কোন অগ্রগতি আছে কি না এ বিষয়ে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে সূত্রটি এবার জানান যে তাঁরা ” প্রেডিক্টেড ইনফরমেশান” (অনুমান নির্ভর তথ্য) ট্রান্সমিট করতে পারছেন না।কারণ ঘুরে ফিরে এর দায় দায়িত্বটা তাদের উপর এসেই বর্তায়। তখন দূতাবাসের সে সূত্রটির কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ভিসা খোলার বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীরা যারপরনাই উদ্বিগ্ন এবং ব্যাপারে যদি আরো স্পষ্ট করে কিছু বলবেন কি… এর উত্তরে তিনি বলেন “আমরা যখন চার বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন আর দুই মাস কি অপেক্ষা করতে পারবো না??” *ভিসা খোলার দিনক্ষণ চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন লেনদেন করবেন নাঃ আমিরাতে বাংলাদেশের ভিসা খোলার বিষয়টি এখনো পাইপলাইনে থাকলেও ভিসার দুয়ার আবার খুলে যাচ্ছে এমন গুজবের ভিত্তিতে ২0১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইউ এ ই তে রাষ্ট্রীয় সফরকে ঘিরে ভিসা ব্যবসার সাথে জড়িত সিন্ডিকেট দেশে ও প্রবাসে নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়। এ সময় আদম ব্যবসায়ী চক্র ঢালাও প্রচার করে যে প্রধানমন্ত্রীর সফরের অব্যবহিত পরেই ভিসার বন্ধ দুয়ার খুলে যাবে।কিন্তু সে সময় নিরাপত্তা,বন্দী বিনিময় চুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি ছাড়া ভিসার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন সাফল্য না এলেও যা দৃশ্যমান হয় তা হল প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর ভিসা ডিপ্লোমেসি নতুন প্রাণ পায়। এরই মধ্যে অ্যারাবিয়ান গালফের গড়িয়েছে বহুদুর কিন্তু বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এবার ঢাকায় ইউ এ ই ভিসা সেন্টার খোলা এবং সর্বশেষ মধ্য অক্টোবরে আমিরাতি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে আদমব্যাপারীদের দল আবার সক্রিয় হয়েছে।আবারও শুরু হয়েছে লেনদেন। তাই প্রবাসী এবং যারা আমিরাতে আসতে ইচ্ছুক তাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ রাখা হচ্ছে যে ভিসা এখনো খোলেনি,যখন খুলবে তখন সরকারী সূত্রের বরাত দিয়ে দেশের মূল্ধারার সব প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হবে কেবল তখনি ভেবেচিন্তে বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে লেনদেন করবেন। এছাড়া ইউ এ ই এবং বাংলাদেশ সরকার এদেশে বাংলাদেশীদের উচ্চ অভিবাসন ব্যয় একটা সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য কাজ করছে। কারণ এই উচ্চ অভিবাসন ব্যয় এর দেনা শোধ করতে যেয়ে এদেশে অনেক বাংলাদেশী যে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তা তাঁরা উপলব্ধি করেছেন।তাই নির্ধারিত অংকের চে’ বেশী টাকা আদমব্যাপারীদের হাতে তুলে দেবেন না। যারা দেশে আছেন তাঁরা ভিসা সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ঢাকার গুলশানস্থ ইউ এ ই ভিসা সেন্টার এবং আমিরাত এ আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাই কন্সুলেট থেকে যাচাই করে নেবেন। *চলছে প্রপাগান্ডা এবং গুজবঃ ভিসা ইস্যুতে আমিরাত জুড়ে চলছে নানা ধরণের প্রপাগান্ডা এবং গুজব। বাজারে গুজব আছে যে বর্তমান সরকারের আমলে ভিসা সমস্যার কোন সুরাহা হবে না। গুজবপ্রিয়দের কেউ তাতে কান দিচ্ছেন,কেউ দিচ্ছেন না। অথচ এটা সত্যি যে বর্তমান সরকারের আমলেই ইউ এ ই তে বাংলাদেশের সবচে’ বেশী মানুেষ এসেছেন। ভিসা সংক্রান্ত কোন গুজবে কান দেবেন না,ভুইফোড় অনলাইন পোর্টালে কি সংবাদ প্রচারিত হলো তা যাচাই করে দেখবেন কতোটা বিশ্বাসযোগ্য।সরকার কাজ করছে,ভিসা খোলার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।এখন আমাদের এই অর্জনকে যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হলে এদেশের আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে যেতে হবে।