প্রবাসে দলপ্রেম নয় দেশপ্রেম-ই পারে দেশের সংকট কাটাতে
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৫:৫৩,অপরাহ্ন ২২ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ১৫৭৪ বার পঠিত
-
লুৎফুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক, প্রবাসের নিউজ
বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটিরও বেশি লোক পরদেশে পরবাসি হয়ে জীবন যাপন করছে। দেশের জন্য দেশান্তরি হওয়া এসব লোক নিজেদের জীবন ও জীবিকার সন্ধানে কাজ করছেন বিশ্বের নানাদেশে। নিজেদের ঘাম ও অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলছে দেশ ও দশের স্বপ্নসৌধ। আবার প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের দুর্দিনে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সই বিপদ বান্ধব হয়ে দাঁড়ায় বলেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কিন্তু এসব প্রবাসীরা দলপ্রেম না করে দেশপ্রেমে এগিয়ে থাকলে দেশ আরো এগিয়ে যেতো। উন্নয়নের মাত্রা থাকতো দূর থেকে বহুদূর। ধরা যাক মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে কথা। এ দেশে বাস করে প্রায় ৯ লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী। এদের মধ্যে শতকরা ১৫% মানুষ সমাজ ও রাজনীতি সচেতন। এরা নিজের পছন্দের দল ও দলীয় কাজ নিয়ে মাতিয়ে রাখেন পরবাসের জমিন। রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে পালন করে যায় দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে। যদিও রাজতান্ত্রিক এ দেশটায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রম নিািষদ্ধ তবুও কমিউনিটির অনুষ্ঠান বলে পালন করা হয় এসব কর্মকাণ্ড। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সক্রিয়। অন্য কোন দলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এ দুটো বড় দলের সবক’টি স্টেটে রয়েছে কমিটি। আবার কমিটির ভেতরেও কমিটি রয়েছে এখানে। মানে দেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির ছোঁয়া এখানেও। দলের মধ্যে রয়েছে আবার কয়েকটি গ্র“পও। দেখা যাচ্ছে এমন ও হচ্ছে একই ইস্যুতে একই সংগঠনের নামে পৃথক পৃথক গ্র“প অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এতে করে অর্থনেতিক লোকসানের পাশাপাশি ঐক্যতা কমে যাচ্ছে এই দূর পরবাসে। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় বরং কমিউনিটির কর্মকাণ্ডেও রয়েছে গ্রুপিং-লবিং। দেশের জন্য কিছু করতে এমন গ্র“পিং লবিং প্রধান অন্তরায়। বরং প্রবাসে বাঙালি শমিকদের অধিকার আদায়ে এবং নিজেদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কাজ করলে ওসব রাজনৈতিক দল আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠতো বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা। বিচ্ছিন্নভাবে প্রবাসীদের নানা অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন ব্যক্তি কাজ করছেন বলে এখনো বাঙালিদের মোটামোটি ভালো অবস্থান রয়েছে। শুধু আমিরাত নয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেখানেই রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির অনুসারিদল সেখানেই একই কর্মকাণ্ড উপস্থিত। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি করলেও একই ব্যনারে নিজেদের সকল স্বার্থভুলে দেশ ও দশের জন্য এক সারিতে দাঁড়াতে হবে।
একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর যে ক্ষুদ্র অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ আজ তা অনেক বিশাল হয়েছে। তবে প্রত্যাশার পাল্লায় এখনো অনেক বাকি। এখনো যেমন রয়েছে বেকারত্বের অভিশাপ ঠিক তেমনি রয়েছে দারিদ্রের ছোঁবল। ভর্তুকির চাপ, দুই অংকের ঘরে মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম বাড়ার সাথে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রেমিটেন্সের নিম্নমুখিতা, ঋণের চড়াসুদ ও সরকারের নানামাত্রিক কারণে অর্থনীতি এখনো অনেক পিছিয়ে।
১৯৯০ দশকে প্রভূত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের এখনো বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। যারা প্রবাসে বাস করেন তারা নানা উন্নত দেশের উন্নত সুবিধা ভোগ করে এটা বুঝেন যে, দেশ আরো উন্নত হোক। এগিয়ে যাক আমার দেশ। যখন দেশের সংকটময় সময় আসে সকলের উচিত দলাদলি ভুলে দেশের তরে কাজ করা। দোহাই লাগে প্রবাসী ভাইয়েরা দেশের নোংরা রাজনৈতিক আচরণ পরিহার করে পজিটিভ গুণ নিয়ে দেশের সেবায় ঐক্যবদ্ধ হোন। নিজেদেরকে বিশ্বদরবারে বীর হিসেবেই প্রমাণ দেন। বাঙালি নুয়েনা। বাঙালি হারতে জানেনা। এ কথাটির প্রমাণে সকলের দেশপ্রীতি নিয়ে কাজ করার এখনই সময়।