সহজেই প্রবাসিদের ঋণ দেয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক : কয়েস সামি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪০:২৯,অপরাহ্ন ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ১৯৫৬২ বার পঠিত
প্রবাসীদের অর্থনৈতিক সহায়তা ও কল্যাণে ২০১১ সালে ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠাকরে বাংলাদেশ সরকার। এই ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য বিদেশগামী কর্মীদেরবিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি নিরাপদে দেশে টাকা পাঠানোরব্যবস্থা করা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাস প্রত্যাশী কর্মীদের মাত্র তিনদিনে ৯ শতাংশ লাভে অভিবাসী ঋণ প্রদান করে থাকে যা বিশ্বে এক অনন্য নজির।তাদের এই অগ্রযাত্রা নিয়ে কথা বলেন ব্যাংকটিরব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সি এম কয়েস সামি। দেশের বিশিষ্ট এই ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রবাসের নিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক । সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রবাসের নিউজ:প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কার্যক্রম কী?
কয়েস সামি :প্রবাসী এবং প্রবাসী হতে ইচ্ছুকদের জন্যকাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর তাদেরকর্মসংস্থানের জন্যও ঋণ দেওয়া হয় এই ব্যাংক থেকে। এসব ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাকেদু’বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এতে করে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে তারা অর্থ পরিশোধকরছেন। এ ছাড়াও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানীতে সহায়তা ও অভিবাসী বাংলাদেশীদেরব্যাংকিং সেবা প্রদান, সম্ভাব্য বিদেশ গমনেচ্ছুদের জামানতবিহীন অভিবাসন ঋণসহায়তা প্রদান (মাইগ্রেশন লোন), দেশে অভিবাসীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশসৃষ্টি ও বিনিয়োগে উৎসাহ দান এবং উন্নত তথ্য প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমেপ্রবাসীদের কষ্টার্জিত মুদ্রা সহজে ও ব্যয় সাশ্রয়ী পন্থায় দেশে পাঠাতেসহায়তা প্রদান করে ব্যাংকটি।
প্রবাসের নিউজ :অন্যান্য ব্যাংকও এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেসব ব্যাংক থেকে আপনার ব্যাংকের পার্থক্য কী?
কয়েস সামি :কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই বিদেশে যেতেআগ্রহী বেকাররা এখান থেকে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। যা অন্যান্যব্যাংক থেকে গ্রাহকরা পাচ্ছেন না। ঋণ আবেদনের অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ দেওয়ারব্যবস্থা করা হয়।
প্রবাসের নিউজ: ঋণ পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন?
কয়েস সামি :আবেদনকারীকে নিয়োগকারী ও ব্যক্তিগতভাবেসংগৃহীত ভিসার দুটি (ভিসা যাচাইয়ের জন্য) ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর প্রদানকরতে হবে। উক্ত ভিসা ৩ কর্মদিবসের মধ্যে যাচাই করে আবেদনকারীকে ব্যাংক থেকে ফোন কিংবা এস.এম.এস-এর মাধ্যমে জানানো হবে। আবেদনকারীর অনুপস্থিতিতেতার ঘনিষ্ঠজনকে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অভিবাসনঋণ গ্রহণের জন্য জামিনদারের অবশ্যই আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে।
প্রবাসের নিউজ :ভিসা যাচাইয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হবে?
কয়েস সামি :অভিবাসন ঋণ গ্রহণের নিমিত্তে আবেদন ফর্ম প্রাপ্তির পূর্বে ব্যবস্থাপনাপরিচালক / ব্যবস্থাপক-এর বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর সদ্য তোলা ৩ কপিসত্যায়িত ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িতফটোকপি, বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সম্বলিত পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদসার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতে হবে। আবেদনকারীর জামিনদারদের প্রত্যেকের সদ্য তোলা ২ কপি করে সত্যায়িত ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি, বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানাসম্বলিত পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করতেহবে। অভিবাসন ঋণ গ্রহণকালে কর্মীকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হবে। অভিবাসী কর্তৃকআয়কৃত সমুদয় রেমিটেন্স উক্ত সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে দেশে পাঠতে হবে। এছাড়াও অভিবাসন ঋণ গ্রহণকালে কর্মীকে বীমা সুবিধা নিতে হবে। আবেদনকারীকেদূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত ভিসা ও লেবার কন্ট্রাক্ট (যেখানে প্রাপ্ত বেতনভাতাদির উল্লেখ রয়েছে) এর ফটোকপি (২ কপি) এবং স্থানীয় ভাষায় অনুবাদকৃতভিসার ফটোকপি কপি (প্রয়োজন সাপেক্ষে) এবং ভিসার যথার্থতা সম্পর্কেবিএমইটি/বোয়েসেলের প্রত্যায়নপত্র প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতারসনদের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে) প্রদান করতে হবে।
প্রবাসের নিউজ: অভিবাসন ঋণ পরিশোধের চার্জ ও নিয়মাবলী কী ?
কয়েস সামি :অভিবাসন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্রশতকরা ৯ টাকা। পরিশোধের দিন হতে সর্বোচ্চ ২ মাস গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করাহয়। দেশ ভেদে প্রাপ্ত ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২বছর। পরিশোধ করতে হবে ২৩টি মাসিক কিস্তিতে। সিংঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ভিসারমেয়াদ অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে গৃহীত ঋণ ১১টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতেহবে।
প্রবাসের নিউজ :এ পর্যন্ত কতজনকে অভিবাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে?
কয়েস সামি :এখান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে গড়ে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে । আর ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি।
প্রবাসের নিউজ:গ্রাহকদের সেবা বাড়াতে আপনার ব্যাংকের উদ্যোগ কী?
কয়েস সামি :বিদেশগামী কর্মীদের ঋণ ও রেমিট্যান্সপ্রেরণের ধারণা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংকটির ৪০টি শাখারয়েছে। ৩টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বুথ খোলা হয়েছে। আরো কয়েকটি শাখাখোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রবাসের নিউজ :সরাসরি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে আপনার ব্যাংকের কোন উদ্যোগ আছে?
কয়েস সামি :প্রবাসীদের জন্য বিশেষায়িত হিসেবে কাজশুরু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে এ ব্যাংক এখনও রেমিট্যান্সসেবা দিতে পারছে না। এ কারণে রেমিট্যান্স সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয়ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছে। দেশের বাইরে এক্সচেঞ্জ হাউস খোলারও আবেদন করাহয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঙ্গে রেমিট্যান্স সেবা সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায়কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রবাসের নিউজ :বিদেশে যেতে আগ্রহীদের ঋণ দিতেই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত। এখন রেমিট্যান্স সেবার প্রতি আগ্রহ কেন?
কয়েস সামি :ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রবাসী কল্যাণব্যাংক সরাসরি কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজকে আরো বেগবান করতে রেমিট্যান্সসংগ্রহের কাজ করতে চাই। বিভিন্ন কারণে প্রবাসীদের একটি অংশ এখনও ব্যাংকিংচ্যানেলের বাইরে অর্থ পাঠাচ্ছে। সরকারি ব্যাংক হিসেবে অপেক্ষাকৃত কমসার্ভিস চার্জ নিয়ে প্রবাসীদের উন্নত রেমিট্যান্স সেবা দিলে তারা ব্যাংকিংচ্যানেলের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অন্য ব্যাংকও কমসার্ভিস চার্জে রেমিট্যান্স সেবা দেবে।
প্রবাসের নিউজ :প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
কয়েস সামি :দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক হবে। আর জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে আমার যা করাপ্রয়োজন তা আন্তরিকভাবে করে যাবো।
প্রবাসের নিউজ:মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কয়েস সামি :ধন্যবাদ প্রবাসের নিউজ পরিবারকেও।