ব্রিটেনে অবৈধদের বৈধ করন এবং কারী শিল্পে স্টাফ সংকট প্রসঙ্গ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৪:৩৯,অপরাহ্ন ০৫ মার্চ ২০১৭ | সংবাদটি ১১৭৬৫ বার পঠিত
-
সাহিদুর রহমান সুহেল
মানুষের জন্মগত অধিকার মুক্ত বাক স্বাধীনতা নিয়ে জন্মালেও আজ ব্রিটেনে অবৈধদের সে বাক স্বাধীনতা সময়ের কাছে বন্ধি ৷সময়ের কাছে সে আজ লাঞ্চিত ৷বিলেতে অনেকে কিশোর বয়সে লেখা-পড়ার পাঠ চুকিয়ে পরিবার বলেন আর নিজেকে উন্নতর জীবনের লক্ষে লক্ষ তরুণ বাংলাদেশী ব্রিটেনে অবৈধ ভাবে পাড়ি দিয়ে জীবন নামক রেলগাড়ি নিয়ে দূসর মরুভূমিতে আশাহত বেদনার চিৎকার করছেন ৷ওয়ানওয়ে জীবনে আজকের এই তরুণেরা যদি কৈশোরে বিদ্যালয়ের দেয়ালের ভিতর আর এখন অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে থাকার ফলে কথা বলা এবং চলা ফেরার যৌবনের উচ্ছাস ভয়ে-আতঙ্কে নীরবে কাটিয়ে দিচ্ছে ৷এদের অমানবিক জীবন থেকে আলোতে নিয়ে আসার আমাদের সমাজপতিদের ভাবনার মাঝে নেই তারা ৷আর যে ক’জন গালা ডিনার,এওয়ার্ড,রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন তারা তাদের চশমার ফাঁকে ব্যবসার দু’চোখে দেশ থেকে লোক নিয়ে আসার ওয়ার্ক পারমিটটা চোখে দেখেন ৷ কয়েকমাস আগে বৃটেনের ইন্ডেপেন্ডেন্ট অনলাইন সংস্করণে দেখতে পেলাম ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ডের প্রবক্তা জনাব এনাম আলী বর্তমানে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের স্টাফ সংকটে দেশ থেকে দক্ষ স্টাফ আনার জন্য সাবেক প্রধান মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন, হোম সেক্রেটারি (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী)থেরেসা মে, হাউজ অব কমন্সের লিডার ক্রিস গেইলিংসহ অন্যান্যদের কাছে পিটিশন প্রস্তুত করে লবিং শুরু করছেন। কিন্তু এনাম আলীসহ এর সাথে জড়িত সবাই কি ভুলে গিয়েছেন আগের ওয়ার্ক পারমিট এবং স্টুডেন্ট ভিসার বন্যায় কী দুর্ভোগে ছিলেন আগতরাসহ তাদের পিতা-মাতা এবং এখানকার আমাদের বাঙালি কমিউনিটি? কাজের দুর্ভোগ, বাসস্থান, শ্রমিক-মালিক মজুরি দ্বন্ধ, বৃটেনের পার্কে রাত্রিযাপনসহ সেই বিবর্ষ অধ্যায় যা আজও আমাদের কমিউনিটি শিউরে ওঠে। আদৌ কি প্রকৃত স্টুডেন্ট কিংবা দক্ষ স্টাফ এসেছিলেন? এর উত্তর আমাদের সকলের জানা৷ তাই আবার ন্যাড়া মাথা নিয়ে বেল তলায় যাওয়ার আগে ফিরে দেখতে চাই সেই সব তরুণদের দিকে, যারা নিজের সর্বস্ব বিক্রি করে নামমাত্র একটি সার্টিফিকেট যোগার করে স্বপ্নের বিলেতে এসেছিলো! এসব ক্ষেত্রে দেখতে পেলাম আমাদের দেশের বেশিরভাগ তরুণরাই এসেছে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য৷ কিন্তু আজ বৃটেনে স্টুডেন্টদের উপর কাল-বৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ এই ধরনের প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে৷ তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে, লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ৷ যেমন লন্ডনগামী বেশিরভাগই আমাদের সিলেটের তরুণ, আজ থেকে ১০ বছর আগে সিলেট থেকে জাতীয় ক্রিকেট দল এবং ফুটবল দলে সিলেটিদের ছিল জয়-জয়কার কিন্তু আজ সিলেটের খেলোয়াড় খুঁজতে হলে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে, আর মনে হচ্ছে- এই যন্ত্রটিও এখন লজ্জা পাবে৷ তরুণদের এসব লোভনীয় জীবন-জীবিকার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যে বিষয়টি তা হচ্ছে ‘কন্যা দায়গ্রস্ত’ পিতা-মাতাদের আহাজারি৷ বেশিরভাগ তরুণদের প্রবাস জীবনের জন্য পিতা-মাতারা তাদের কন্যার জন্য সু-পাত্রের সন্ধান যেন সোনার হরিণ৷ কারণ এসব তরুণেরা বিলেতে একবার এসে গেলে ফিরে যাওয়াটা অনেক কষ্টের হয়ে ওঠে নানান কারণে, যেমন: সর্বস্ব বিক্রি করে আসা, একটু উন্নত জীবন-যাপনের জন্য, পরিবারের সদস্যদের মৌলিক চাহিদা নিবারণের জন্য- আর তা ভাবতে ভাবতে একদিন দেখে নিজের বেলা শেষ হয়ে এলো৷ একসময় পরিবারের সুখ আনয়নের জন্য নিজের জীবনকে উত্সর্গ করে দেয়, ফলে তার আর ফেরা হয়না৷ তবুও মনের কোনায় একটু আশা নিয়ে স্বপ্ন দেখে এই বুঝি লিগেলিটির চিঠি এলো তার দরজায়, কিন্তু আশা আর পূরণ হয়না৷ এরই মাঝে চিরতরে হারিয়ে যায় কারো পিতা-মাতা৷ এতসব বিসর্জনের মধ্যে একদিন কারী শিল্পের দক্ষ কারিগর হয় তাতে সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তাদের এসব ত্যাগের দক্ষতার মূল্যায়ন কারো কাছে নেই৷ সবাই শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখে৷ দীর্ঘদিন বৃটেনে বসবাসের কর্মদক্ষতা নিয়ে আজ লক্ষ প্রবাসী বাঙালি এক অনিশ্চয়তার জীবন নিয়ে স্বদেশ কিংবা ইউরোপমুখী হচ্ছেন৷ অথচ এদেরকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে৷ তাদের পক্ষে কথা বলার কিংবা বৈধকরণে আওয়াজ তোলার কেউ নেই৷ তবে আছেন একজন বরিস জনসন;ব্রিটেনে বসবাসরত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে বাতাসে কথা ভাসছে দীর্ঘদি ধরে !মূলত এই দাবীকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাণবন্ত করে রেখেছেন বর্তমান এই ফরেন সেক্রেটারি !অবৈধ ইমিগ্রান্টদের নিয়ে ইইউ রেফারেন্ডামের সময় করা পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দিতে কথা বলেন সাবেক এই লন্ডন মেয়র !দাবীটি তিনি আবার জোরালো করেন সম্প্রতি কেবিনেটে তার সহকর্মীদের বলেছেন “যারা ১০ বছরেরও বেশী সময় ধরে অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে এদেশে থাকার সুযোগ দেয়া উচিত !আগামীতে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্তরায় না হয়ে সহায়ক হবেন তারা !অবৈধদের বৈধ করণের দাবীটি আরো জোরালো হয় যখন ইউকে বর্ডার এজেন্সির সাবেক চিফ এক্সিকিউটিব (২০১১-২০১৩) তার একটি চূড়ান্ত রিপোর্টে অবৈধদের বৈধ করণের সুপারিশ রাখেন !বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৫০০ ০০০ অবৈধ আদিবাসী রয়েছেন ! প্রায় লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান আর বিলিয়ন পাউন্ডের কারিশিল্প আজ স্টাফ সংকটের কারণে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে !ব্রিটিশ সরকারকে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে !
সরকারের অবগতির জন্য বলছি বেকারত্ব গোচনের জন্য বাংলাদেশ একমাত্র জাতি যারা অন্নান্য জাতি সহ বিশেষ করে কাল কেউ দেশ থেকে আসলে আজ তার তার রেস্টুরেন্টের চাকুরীর নিশ্চয়তা রয়েছে ! আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই এখানে যারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে বৈধতা দিলে বর্তমান স্টাফ সংকট আর থাকবেনা বরং তাদেরকে বৈধতা দিলে বৃটেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হবে কিংবা বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক আনার ঝামেলায় আর যেতে হতো না৷ ৷ তাছাড়া এখানকার অবৈধরা পেতো নতুন এক সূর্যোদয়৷ আর এদের বৈধতা প্রাপ্তির পরও যদি সংকট কুলিয়ে না ওঠে তখন বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আনার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় আনা যায়।
নতুন করে ওয়ার্ক পারমিটে আবার সুবিধা পাবে প্রিয় দুলাভাইয়ের শ্যালকের৷ বৌকে খুশি করার জন্য শ্যালকের লন্ডন আগমনের পথ সুগম করা৷ আর ব্যবসায়ীরা ঈদের চাঁদ হাতে পাবেন একেকটা ওয়ার্ক পারমিট ২০/২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করবেন৷ ব্রিটিশ সরকার এবং সুস্থ বিবেককে ভাবতে হবে নতুন করে ঝামেলা সৃষ্টির চেয়ে এখানকার অবৈধদের বৈধতা দানে সমস্যার ইতি টানতে৷ ব্যক্তিস্বার্থকে পরিহার করে বৃহৎ স্বার্থ চিন্তা করা উচিত, তবেই আমাদের সকলের মঙ্গল হবে৷ প্রকৃত স্টুডেন্ট এবং দক্ষ স্টাফদের দরজা বৃটেনে সবসময় খোলা রয়েছে৷ তবে জনাব এনাম আলীর লবিং’এর স্টাফ অনুমোদনে দেশে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে যাবে নকল শেফ প্রতিযোগিতার সার্টিফিকেট সংগ্রহে৷ তাতে মাত্র দুই-পক্ষই লাভবান হবেন এখানকার এবং বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টের মালিক পক্ষ৷ এখানে ব্রিটিশ সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে৷ এনাম আলী ভাইদেরকে বলছি যদি কিছু করতে চান তাহলে এই অবৈধ দক্ষ স্টাফদেরকে বৈধতা করুন, লবিং করুন৷ তবে একটি কথা আগাম বলে রাখি এবার এরকম পিটিশনের বিরুদ্ধে অনেকই রুখে দাড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ৷ একবার চিন্তা করে দেখুন এসকল অবৈধরা দীর্ঘদিন বিলেতে থাকার ফলে, না পারে চিরতরে দেশে যেতে, না পারে স্বচ্ছল ও নির্ভয়ে জীবন-যাপন করতে৷ দেশ ও বিদেশের মাঝে কোনো এক খাঁচায় আটকা পরে থাকে, সেটা উন্নতর জীবন-যাপন হোক আর দু’কাঁধে পরিবারের বোঝা নিয়ে চলা হোক৷ বলতে দ্বিধা নেই অবৈধরা ক্ষুধা আর বাসস্থানের জন্য আইনের ভয়কে জয় করে মালিক-বেতন বৈষম্যের শিকার তারা প্রতিনিয়ত ৷এদের জীবন কখনো সহজ হয়না,তবে দিন দিন এরা আরো শক্তিশালী হচ্ছে ৷তবে তাদের মনে ভয় নেই কারন মহাত্মা গান্ধী বলেছেন- প্রথমে তারা তোমাকে উপভোগ করে, তার পর তোমাকে উপহাস করে, তার পর তোমার বিরুদ্ধে লড়াই করে, তার পর তুমি জয়ী হও.. রাতের সব নীরবতাকে ছাপিয়ে অবৈধদের ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছল সূর্যোদয়ের জয় হবেই ৷
সাহিদুর রহমান সুহেল ক্রীড়ালোক প্রতিনিধি যুক্তরাজ্য এবং চিফ রিপোর্টার বাংলা মেইল