- অন্যান্য
- স্মৃতির আয়না -১৫
স্মৃতির আয়না -১৫
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৩১:০৫,অপরাহ্ন ১২ মে ২০১৭ | সংবাদটি ১০৪৩ বার পঠিত
আহমেদ শামীম
স্মৃতিকথায় আমার চেনাজানা ক্ষুদ্র পরিমন্ডলের মানুষজনকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে দেখেছি নানা ভুমিকায়। যাদের কথা স্মৃতিতে ভেসে উঠে বারবার, তাদেরকে আলোকপাত করি। এতে অনেকের না জানা কথা প্রকাশ পেয়ে যায়। যদিও ব্যক্তিগত বিয়ষগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তবে কখনো অব্যক্ত অনেক বিষয় চলে আসে বাস্তবতার পটভূমিতে। যে কারণে কেউ কেউ মনঃক্ষুণœ হতে পারেন। তবে কাউকে হেয় করার কোন উদ্দেশ্য বা অভিলাস আমার নেই। কেবল সত্য তুলে ধরতে যতটুকু সম্ভব অবিতর্কিত বিষয় প্রকাশের প্রাণান্ত চেষ্টা করি। যা সাদা চোখে দেখেছি,মনের গহীনে ঠাঁই দিয়েছি,তা তুলে না ধরলে স্মৃতিকথার স্বার্থকতা থাকবে না। এতে কারো মনে কোন ধরণের কষ্ট লাগলে আমি বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।আজকের স্মৃতিকথায় যাকে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করবো, তিনি সমাজের অত্যন্ত পরিচিত মুখ।সদালাপী,নিরহংকার যার অলংকার, রাজপথে যার সরব উপস্থিতি। দলমত নির্বিশেষে যিনি সকলের কাছে অত্যন্ত আপন । আওয়ামী লীগের খাঁটি নেত্রী হিসেবে যিনি ইতোমধ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।মাটি ও মানুষের জন্য যিনি আজীবন কাজ করে যাচ্ছেন। যার নিষ্কলুষ রাজনৈতিক তকমা সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে আলোচিত। এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে বিশেষ গুরুত্ম দেন । তিনি হচ্ছেন সিলেটের সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি ‘ভাবী’ হিসেবে পরিচিত।
সব কর্মেরই একটা রেজাল্ট থাকে। মূল্যায়ন হয়। যারা নির্ভীকভাবে মনপ্রাণ উজাড় করে নিজ দায়িত্ব পালনে থাকেন ব্রতী,তাদের কর্মের মূল্যায়ন হয় এটা আমি দৃঢ়বাবে বিশ্বাস করি। যেমনি হয়েছিলেন আজকের স্মৃতিকথার আলোচিত মানুষ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।তবে সবাই যে পুরোপুরি কর্মের ফল ভোগ করেন,তা কিন্তু নয়।কেউ পূর্ণাঙ্গ প্রতিফল লাভ করেন না। কারণ মানুষের আশা আকাংখার সীমা পরিসীমা নেই। যে যত পায়, তত চায়- এটা আমাদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। তবে জানিনা, আমাদের ‘ভাবী’ যা পেয়েছেন,তাতে কতখানি পরিতৃপ্ত বা সন্তুষ্ট।আরপরও আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, তিনি অবমূল্যায়িত হননি। দল তাকে মর্যাদাসীন পদে রেখেছে দীর্ঘদিন। তিনি পার্লামেন্টের মেম্বার পর্যন্ত হয়েছিলেন। তার সাথে অনেকেই রাজনীতি করছেন দীর্ঘকাল ,কিন্তু কয়জন এমপি হতে পেরেছেন? এক্ষেত্রে তাকে সৌভাগ্যবতী বললে অত্যুক্তি হবে না। ভূমিকাটা বেশি হয়ে যাচ্ছে হয়তো। আর কাঁসুন্দি ঘাঁটাচ্ছি না। এবার আসি মূল বক্তব্যে।
সৈয়দা জেবুন্নেছা হক একজন সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে আমি মনে করি। সিলেটের রাজপথে যে ক’জন মহিলার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়,তন্মধ্যে সর্বাগ্রে আসবে তাঁর নাম।‘ভাবী’ নামে সবাই চিনেন তাঁকে।রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক পরিচিত এই ‘ভাবী’ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সভানেত্রী। সাবেক এমপি। নগরীর তাঁতীপাড়ার বাসিন্দা । দলমত নির্বিশেষে সকলের এই ভাবী রাজপথের সামনের কাতারের জাঁদরেল নেত্রী।তিনি শুধু নিজের দল নয়;অন্যান্য দলের নেতাকর্মীকেও খুব সহজে আপন করে নেন।একসময় আমিও ছিলাম ভাবী’র খুবই স্নেহধন্য। দৈনিক সিলেটের ডাক-এ সাংবাদিকতাকালীন সময়ে তাঁর সাথে ছিল বেশি যোগাযোগ। তিনি যে আমাকে কতটুকু গুরুত্ব দিতেন সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করবো এখানে।
সৈয়দা জেবুন্নেছা হক আওয়ামী রাজনীতির একজন পরীক্ষিত সৈনিক। বিশেষ করে মহিলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা, নেত্বত্ব দেয়া, রাজপথের সামনের কাতারে থাকা-সবই করতেন নির্ভীকভাবে। সমাজ সংসার সব তুচ্ছ করে গণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি থাকতেন অগ্রণী ভুমিকায়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তিনি যে সাহসী ভূমিকা রাখছেন,তারজন্য দল থেকে অবশ্য পুরষ্কৃত হয়েছিলেন এমপি হয়ে।
অনেক দিন আগে আওয়ামী লীগের এই তৃণমূল নেত্রীর একটি ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম সিলেটের ডাক-এর জন্য।তখন তিনি এমপি হননি।এমপি হওয়ার পর একদিন আমাকে ফোন করেন । বলেন,‘শামীম তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’-কেন? জিজ্ঞেস করতেই বললেন,ঐ ইন্টারভিউ নাকি তাঁর জন্যে অনেক উপকার দিয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে,১৯৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে,কখন সারা দেশ থেকে ৩০জন সংরক্ষিত মহিলা এমপি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছিল। সিলেট থেকে সৈয়দা জেবুন্নেছা হক সহ ক’জন প্রার্থী হন। তারা আওয়ামীলীগের সংসদীয় বোর্ডে ইন্টারভিউয়ের জন্য কাগজপত্র জমা দেন। অন্যান্য কাগেজপত্রের সাথে তিনি সিলেটের ডাক-এ প্রকাশিত তাঁর ইন্টারভিউ’র পেপার কার্টিংও জমা দেন। সিলেটের ডাক যেহেতু বহুল প্রচারিত দৈনিক।সেজন্য সচিত্র ইন্টারভিউটি বিশেষ গুরুত্ব দেয় সংসদীয় বোর্ড। এক পর্যায়ে সব প্রার্থীকে পেছনে ফেলে তাঁকে মনোনীত করা হয় এবং ভাবী পেয়ে যান দলের টিকেট। হয়ে যান সিলেটের মহিলা এমপি।যা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পুরস্কার বলা যায়।
যাক, ভাবী আমাকে সেদিন ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন,‘তোমার জন্যে আমি এমপি হতে পেরেছি।’এরপর থেকে তাঁর সাংগঠনিক এবং সংসদীয় সব সংবাদ আমার কাছে পাঠাতেন।এমনকি জাতীয় সংসদ থেকে ফোন করতেন প্রায়ই।
ভাবী এমপি থাকাবস্থায় একটা তদ্বিরের জন্য গিয়েছিলাম তাঁর কাছে। অবশ্য আমার জন্য নয়। নগরীর কুমারপাড়ার বাসিন্দা আমার এক বন্ধু।নাম জুনেদ আহমদ। তাঁর রেশনের ডিলারশীপ ছিল।নতুন সরকার আসায় ডিলারশীপের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।আমার সেই বন্ধুটি পড়ে বিপাকে। অনেক ঘোরাঘুরির পর কোন কূলকিনারা করতে পারছিল না।সর্বশেষ আমার শরণাপন্ন হয়।একদিন সে আমার অফিসে আসে। অনুরোধ করে যদি স্থানীয় এমপি রিকমেন্ড করেন,তবে তাঁর ডিলারশীপ পেয়ে যাবে।। তাকে বলি,আমি তো কারো জন্য ভাবীর কাছে তদ্বির করিনি। কিভাবে কি করি বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে সে বারবার অনুরোধ করতে থাকে।দেখি কি করা যায় বলে সেদিন তাকে চলে যেতে বলেছিলাম।
পরবর্তীতে নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে সে।কোন অবস্থায় পিছু ছাড়ছে না। যে করে হোক ভাবীর কাছে গিয়ে তার জন্যে একটু তদ্বির করার জন্য অনুনয় বিনয় অব্যাহত রাখে।অনন্যোপায় হয়ে একদিন ভাবীকে ফোন করে বলি, আপনার কাছে আসছি একটা কাজে। তিনি তাঁতীপাড়াসস্থ তাঁর বাসায় যেতে বলেন।পরে জুনেদকে নিয়ে ভাবীর বাসায় যাই।ভাবী জুনেদের ব্যাপারটি শুনে সাথে সাথে ফোন করেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কাছে। কর্মকর্তা জুনেদের আবেদনপত্রে ভাবীর সীল-স্বাক্ষর দিয়ে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেন।পরে ভাবী সীল-স্বাক্ষর দিয়ে দিলে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নেই। জুনেদ যখন ডিলারশীপ পেয়ে যায় তখন একদিন আমাকে ফোন করে। ধন্যবাদ জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ দেয়।সেদিন বলেছিলাম,সময় করে আসবো একদিন। যদিও তার ওখানে মিষ্টি খেতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
শুনেছি,আমাদের ভাবী এমপি থাকাবস্থায় জনকল্যাণে রেখেছেন গুরুত্মপূর্ণ ভূমিকা। সিলেটের উন্নয়নে সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করে গেছেন। কেউ তাঁর কাছে গিয়ে নিরাশ হয়নি। সহযোগিতা করেছেন সর্বাত্মকভাবে। যে কারণে তিনি গণমানুষের প্রিয় নেত্রী হতে পেরেছিলেন। বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্ম তাঁর রাজনৈতিক ও কর্মজীবন অনুস্মরণের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।