সমছু পাগলা !
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০০:৪৫,অপরাহ্ন ০৮ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ৮১২ বার পঠিত
আফসার খান সাদেক
মনে মনে ভাবছিলাম কিছু লিখবো বাংলাদেশের এই দামী ব্রান্ডের গোল্ডলিফ সিগারেট আর দিয়াশলাই নিয়ে কিছু কথা , আমার কাছে এই সিগারেট প্যাকেট গত ১২/১৩ বছর যাবত রক্ষিত আছে আমার লকারের মধ্যে । অনেকে হয়তো শুনেছিলেন জাতীয় পত্রিকাতে পড়ছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন(প্রয়াত) ২০০৯ সালে অতর্কিতভাবে সমছু পাগলার বাড়িতে !!!
আমি নিউজ পড়ার পর আমারও যেন যাইতে বড় ইচ্ছা জাগলো ঠিকানা ডায়রিতে লিখে রাখলাম ঐ বছর ২০০৯সালের জুন মাসে আমি এমিরাটস এয়ারলাইন্স যোগে হিত্রো-ডুবাই-ঢাকা গেলাম বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন অলিল,সুজন,সাদাত,শফিক,মজিদ,ফরহাদ,ফারুক, রনি,রেদওয়ান,লালভাই,সহ আরো অনেকে, নেমেই বললাম আমি এই ঠিকানায় যাবো, মুন্সিগন্জ, গজারিয়া , সুজন ওস্তাদ রাস্তাঘাটের জন্য বললো আমি চিনি এটা পদ্মানদীর পারে ৪০/৫০মাইল হবে বললাম চলো সবাই খুশি ৪টা গাড়ি নিয়ে সমছু পাগলার বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম, পদ্মা পাড়িদিয়ে গ্রামের মেটোপথ কাঁচা পাকা রাস্তা ভালই লাগছিলো ।
পুরো ভাটি এলাকা , গ্রামের পথে আনুমানিক ৩০মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা মোড় পেলাম ঐখানে কয়েকটা দোকান চা বিস্কুট, চানা পিয়াজু বিভিন্নকিছু বিক্রি করছে, গাড়ী থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সমছু পাগলার বাড়ী মানুষ দেখিয়ে দিল ঐ পিছনে গাড়ি যাবে না , একেবারে গরিব এলাকা কোন পাকা বাড়িঘর নাই । আমরা গাড়ি রেখে হাটতে শুরু করলাম কোন নিদৃষ্ট রাস্তা নহে কোন বাড়ির উঠান, কোন বাড়ির পিছন গিয়ে পৌছিলাম সেই কাম্খিত জায়গায় সমছু পাগলার বাড়িতে ।
তেমন কিছু নেই দুচালা টিনের ২/৩টা ঘর ছোট,ছোট গড়ে ৫/৬জন মানুষ পুরুষ বাড়িতে দেখা গেল । চতুর্দিকে পানি ধৈ ধৈ করছে পদ্মা নদীর পানি । যাদেরকে দেখছিলাম এরা সকলই সোজা টাইপের মানুষ আমাদের যাওয়াতে কারো কোন রিয়েক্ট নাই । বুজলাম এখানে কিছু আছে , না সাহারা আপা আসার কারন নাই নিশ্চয় কিছু আর আমিতো ৩৬০আউলিয়ার দেশের মানুষ আমারতো আলাদা একটা শ্রদ্ধা আছে । একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম আমরা সমছু পাগলার সাথে দেখা করতে এসেছি , মনে মনে ভাবছিলাম হয়তোউনি শিকলপরা থাকবেন সেই ভয় ও কাজ করছে ।ঐ ভদ্রলোক বললেন ঐ যে উনি সমছু পাগলা, সাদা পান্জাবি লুংগি পরে পানির ধারে উপরি (কোনকিছু ছাড়া) বসে আসেন , কাছে গিয়ে সালাম দিলাম মাথা নাড়লেন আর সকলের দিকে ঘুরে ফিরে চাইলেন তারপর উঠে ঘরের ভিথর নিয়ে আসলেন । ঘরের ভিথর বসার একটা ব্রেনচ আর একটা পালং বা খাট আমরা বসলাম খাড় রইলাম আর খাটের উপর কিছু ফ্রুট দেখতে পেলাম ভাল করে দেখলাম ঘরের ভিথর আমরাও কিছু ফলমুল নিয়ে গিয়েছিলাম সেগুলোও জড়ো হল ঐ খাটে ?
সমছু পাগলা অপলক দৃস্টিতে আমাদেরকে দেখছেন মাথা ঘুরিয়ে, ঘুরিয়ে একেকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন নাম ঠিকানা আমাকেও জিজ্ঞাসা আমি বললাম সিলেট , সিলেট কাল আসলে না কেন বলে বড় আফসুস করলেন !!!
আসার পালা যে বাহির হচ্ছে কাউকে কিছু না করলেও একজনকে লাথি মারলেন আর কমলা দিলেন, আরেকজনকে ঘাড়ে চড় মারলেন আর আমাকে মাথাচাপড়িয়ে সিগারেট আর ম্যাচবক্স দিলেন ?
চলে আসতে উনার ছেলে বললেন কোন ভালকাজে গেলে সিগারেট খাবেন, বিপদ আপদের সময় সিগারেট খাবেন ? এরপর বললাম লাথিতে কি হবে বললেন উনার মঙ্গল হবে । সত্যিই হয়েছে উনি বড় শিল্পপতি, আরেকজন বিনা খরচে সম্মান কামাতে ক্যানাডাতে , কিন্তু আমার সিগারেট অক্ষত অবস্তায় আছে, রাখছি !! সুযোগ হয় নাই খাওয়ার !!
আবারও গিয়েছিলাম এখন আর সমছু পাগলা নাই আছে তার মাজার বিরাট মাজার একেবারে দৃস্টিনন্দন ।
মানুষজনের কাছে সমছু পাগলা সম্পর্কে জানতে চাইলাম, মানুষ বলেন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো নদীতীরবর্তি এলাকা এক ভরা বর্ষায় উনার দুই ছোট ছেলেকে নিয়ে পদ্মায় ঝাপ দেন হাজারো মানুষের সামনে এবং ছেলেদের ছেড়ে ঘন্টা খানেক পরে ভেসে উঠেন , সেই থেকে ঐ এলাকায় নদীভাঙ্গন নাই, আর সেই থেকেই সমছু পাগলা ।
আফসার খান সাদেক
লন্ডন প্রবাসী রাজনীতিবিদ,
সমাজসেবী
( বহিঃবিশ্বে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র মুরাল এর প্রতিষ্টাতা )
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০