সেন্ট্রাল ফ্লোরিডাতে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জিল্লুর রহমানের দাফন সম্পন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪২:৩৫,অপরাহ্ন ২৪ মে ২০২১ | সংবাদটি ৪৩৬ বার পঠিত
জুয়েল সাদত
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষাবিদ, লেখক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত অধ্যাপক জিল্লুর আর খান ২২ মে শনিবার সকালে ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে একটি নার্সিং হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ফরিদপুরের সন্তান জিল্লুর আর খান স্ত্রী, ৩ পুত্র, এক কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। উনার ৩ ছেলে রিয়াজ, তমিজ, কবির । আর একটি মেয়ে মেরী। উনার আরেকটি পালিত কন্যা রয়েছে যার নাম ওয়াসিমা ওয়ালী। ওয়াসিমা দীর্ঘদিন উনার সাথে বসবাস করেছিল ওরলান্ডোতে।
তিনি দীর্ঘদিন থেকে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডাতে বসবাস করতেন। সর্বমহলে সুপরিচিত ডক্টর জিল্লুর রহমানের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা শহরে শোকের ছায়া পড়ে যায়। গত রোববার ২৩ শে মে দুপুর সাড়ে ১২ টায় সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার কিসিমির মুসলিম সেমিট্রিতে উনার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজে জানাজাতে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কমিউনিটির গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সহ কমিউনিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যারা নামাজে জানাজায় অংশ গ্রহন করেন তারা হলেন ডাঃ মুরাদ খান ঠাকুর, প্রকৌশলী ইকবাল হায়দার,ডাক্তার নুরুল আমিন,ডাঃ মুন্না, প্রকৌশলী নিপুন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খালেদ ই খোদা, তাকওয়া মসজিদের ট্রাস্টি আশিকুর রহমান, সেমিট্রির চার জন পরিচালক গোলাম সাদাত, হুজ্জাতুল ইসলাম বেলাল, ইকবাল আহমদ ও কুদরত আলী। আরোও ছিলেন ডাক্তার আতিকুজ্জান, ডাঃ জামান, ডাঃ জিন্নাহ, বাংলাদেশ সোসাইটির ড. জিল্লুর রহমানের ছাত্র কিবরিয়া ফরহাদ বাবলা, মনির আহমদ ও জয়নাল চৌঃ বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ফখরুল আহসান শেলী, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আজিজুর রহমান ও সাব্বির রহমান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের এ কে এম হোসেন হিটু, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি গোলাম সাদত জুয়েল। নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন মওলানা আবদুর রহমান পাটেল। শহরের বিভিন্ন সিটি থেকে অনেক প্রবাসী নামাজে জানাজাতে উপস্থিত হন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. জিল্লুর রহমান খান ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের প্রফেসর এমিরেটাস ছিলেন। তিনি সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার রলিংস কলেজেও অধ্যাপনা করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে। তার লেখা ১২টি গ্রন্থ সারাবিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তার কমপক্ষে ৫০টি গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্র তথা সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ স্থাপনা শিকাগোর “সিয়ার্স টাওয়ার’র” এর স্থপতি এফ আর খানের ভাই জিল্লুর আর খান শিক্ষকতা এবং মৌলিক লেখা-লেখির জন্যে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করার আলোকে ১৯৮৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির শুনানীতেও তাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
খ্যাতনামা এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর চিন্তার প্রতিফলন হিসেবে প্রকাশিত গ্রন্থের অন্যতম হচ্ছে : ‘লিডারশিপ ইন দ্য লিস্ট ডেভেলপমেন্ট ন্যাশন : বাংলাদেশ’ (১৯৮৩), ‘মার্শাল ল’ টু মার্শাল ল’ : লিডারশিপ ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ (১৯৮৪), ‘দ্য থার্ড ওয়ার্ল্ড কারিশমা : শেখ মুজিব এ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ (১৯৯৬) ইত্যাদি। ২০১৪ সাল থেকে তিনি বাংলাতেও লেখালেখি শুরু করেছিলেন।
মরহুম ডক্টর জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা মহানগর আওয়ামী লীগ, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা যুব মহিলা লীগ ও প্রবাসের নিউজ ডট কম।
মরহুম ডক্টর জিল্লুর রহমানের মওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত গন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জাতির পিতার রাজনৈতিক জীবনের ধারাবিবরণী হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। সেই বইটি অনেক মুল্যবান। তিনি রবীন্দ্র সংগীত ভাল গাইতে পারতেন। উনার একটি রবীন্দ্র সংগীতের সিডি বাজারে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়্তা পায়।
তিনি প্রায়ই সোস্যাল মিডিয়াতে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন।
তিনি উনার ভাইয়ের ১৯৭২ সালে প্রতিষ্টিত আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম প্রতিষ্টান শিকাগোর “বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন” ট্রাষ্ট্রি ছিলেন এবং ৮২ সাল থেকে সেই নেন প্রফিট অর্গানাইজেশনের সভাপতি ছিলেন৷
ওরল্যান্ডোতে বসবাসরত ডক্টর জিল্লুর রহমানের আত্বীয় সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব সাব্বির রহমান জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে সকল সভা-সমাবেশে তিনি কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর পরিববার ও স্বাধীনতা যুদ্ব নিয়ে কোন আপোষ ছিল না। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসাবে অনেক মুল্যবান বক্তব্য্ দিয়েছেন ও বই লিখেছেন। উনার আরেকটি বড় গুন ছিল যে কোন বাঙালির নাম একবার শুনলে তা ভুলতেন না । তার মত একজন গুণী ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে সর্বস্তরের প্রবাসীদের মধ্যেই গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ডক্টর জিল্লুর রহমানের আরেকজন ঘনিষ্টজন ডাঃ আতিক জানান, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নিয়ে তিনি উনার সাধ্যমত চ্যারিটি করে গেছেন আমৃত্যু। অনেক বড় মাপের এই সিনিয়র সিটিজেন বাংলাদেশের এক অমুল্য সম্পদ ছিলেন।
উনার আরেকজন ঘনিষ্টজন জনাব খালেদ ই খুদা জানান, উনার মত গুনি মানুষ কম জন্মায়। তিনি একজন ভাল মনের মানুষ ছিলেন৷ উনার শুন্যতা অপরনিয়।
ডক্টর জিল্লুর রহমান বাংলাদেশে গেলেই তৃতীয় মাত্রায় উপস্থিত হতেন। একজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডক্টর জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের ছিলেন।