মায়ের বোন খালা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৪:৩০,অপরাহ্ন ২১ ডিসেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৩০৪ বার পঠিত
তাসলিমা খানম বীথি
দেখা হলেই একদম আমার মা খালাদের মতই কথা বলেন। এতটা মায়া বহন করেন নীলা আপাসহ তার পুরো পরিবার। আপার সাথে আমার অনেক কিছুই মনের অনুভবের সাথে মিলে যায়। যেনো আমরা একেই মায়ের পেট বোন। নীলা আপা আম্মা ফ্রিডমে ভর্তি হবার পর থেকে আমি ডিউটিতে যাবার পর খালু চলে যেতেন। আপা ব্যাংকে। কেবিনে খালা একা থাকলেও কিছুক্ষন পর পর দেখে আসতাম। হসপিটালে প্রত্যেক স্টাফই আমার কেয়ারিং ভাবত আমার মায়ের বোন খালা। দুপুরে লাঞ্চ নিয়ে আসেন খালু আর আপা মেয়ে সোহা। খালা খেয়ে আমার জন্য কিছুটা রেখে দেন। কল দিলেই তিনি একা ভাবতাম সমস্যা ছুটতাম কেবিনে যেতেই আপার মাবাবা জোর করে খাওয়াতেন। আমাকে রেখে কেউ কিছু খেতেন না। মনে হতো হসপিটালে নয় তাদের বাসাতে আছি। একমিনিটে মনে হয়নি আমি তাদের রক্তের কেউ না। কিছু সম্পর্ক রক্তের চেয়ে আপন হয়। এরকম ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না। আপা ব্যাংকে থেকে এসে হসপিটালে আবার যখন রাতে দুলাভাই সাংবাদিক সালমান ভাই সাথে বাসা ফিরতেন তখনও ম্যাসেস দিয়ে খোঁজ দিতাম ও নিতাম। এদিকে আলিয়াসোহা আমি যখন রোগিদে দেখতে রাউন্ডে যেতাম সেও যেতো। বারান্দা তার নানার সাথে হাটতো দৌড়াতো। দেখো মনে হতো তার নানুকে নিয়ে নিজ বাসাতেই আছে। আমাদের হসপিটালে যে কোন রোগি পরিবার তার আপনভবন মতই মনে করে।
২. অপারেশনের আগেই খালা বলে রাখেন আমি যেনো ওটির সময় পাশে থাকি। ডিউটি শেষ করে বাসা এসে আবার হসপিটালে ছুটি। খালাকে কেবিনে থেকে ওটি টলিতে নিজেই নিয়ে যাই। অপারেশন থিয়েটারে খুব প্রয়োজন না হলে আমি যাই না। যদিও কোন রোগির প্রয়োজনে যাই। তাদের মনে সাহস শান্তনা দেবার জন্য। সেদিনও নীলা আপা মাকে ওটি টলিতে মাথা হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলি আল্লাহ ভরসা করুন। আমাকে দেখে এন্যাস্থিসিয়া ম্যাডাম বললেন বীথি কে তুমার আত্মীয় জিও বলে ওটি থেকে বের হই। নীলা আপা কাঁদছেন। সবাই বিষন্ন টেনশনে তখনও আপাকে শান্তনা দেই। আমি ত জানি আপাও আমার মত তার পরিবারের শক্ত হাতে দায়িত্ব পালন করছে। মাবাবা যে আমাদের পৃথিবী। আপার চোখে জল আমারও চোখ ভিজত। ওটি শেষে আবার পোস্ট অপারেটিভে খালাকে বেডে দিয়ে সবাই দেখা করার পরই তাদের কাছ থেকে বিদায় নেই। এমডি স্যার জনাব ইকবাল মাহমুদ খালাকে দেখতে ব্যস্ততার ফাকে ছুটে আসেন ফ্রিডমে। উনার সেবায় যেনো ত্রুটি না হয় আগেই আমাদেরকে বলে রেখেছেন। নীলা আপার আম্মা ফ্রিডমে ভর্তি পর থেকেই চেষ্টা করেছি আমিসহ হসপিটালে প্রত্যেকই আন্তরিকতা দিয়ে সেবা দিতে। আমার কেয়ারিং দেখে খালা হেসে বললেন-বীথি মনে হয় তোমার বাসাতে আছি। মাকে নিয়ে আপা বাড়ি ফিরছে। কবি ও ব্যাংকার নীলা আপার মাবাবাসহ তাদের সবার প্রতি অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা।
তাসলিমা খানম বীথি
ফ্রিডম জেনারেল হাসপাতাল
এয়ারর্পোট রোড আম্বরখানা
সিলেট ২১ ডিসেম্বর ২০২১