কথার কথকতা
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৩:১৭,অপরাহ্ন ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | সংবাদটি ১৫৯ বার পঠিত
–মাইন উদ্দিন আহমদ
মিডিয়াতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই দেখেন, এরকম একটা ধারনা সবাই লালন করেন। যুক্তিসঙ্গতভাবে আমিও এই অভিমত মেনে নিতে প্রস্তুত। কারন মিডিয়ার লোক একটু বেশি না দেখলে নিউজ করবেন কি করে! সাধারন মানুষের চেয়ে সংবাদকর্মীর দৃষ্টি একটু প্রখর হতেই হবে। তবে আমি কতটুকু প্রখরতা অর্জন করতে পেরেছি তা নিশ্চিত করে মেপে বলতে পারবোনা। চার দশকেরও বেশি সময় মিডিয়া জগতে বিচরনের পর একটা মানুষ খুব চালু না হলেও শাণিততো অবশ্যই হবেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি একটা বিষয় আবিষ্কার করে আমি নিজেই বিস্মিত হয়েছি এই ভেবে যে, এতো দিনেও আমি এটা লক্ষ্য করলামনা কেনো। বিষয়টা খুলেই বলি।
ব্রুকলিনের ওজোন পার্ক এলাকাটি পড়েছে জ্যামাইকাতে। এর ব্রুকলিন সাইডে প্রায় শেষ প্রান্তে মান্নান হালাল সুপারমার্কেট। এটি এবং এর কাছাকাছি গোল্ডেন ফার্ম, আবদুল্লাহ, প্রিমিয়াম প্রভৃতি বড় বড় বেশ কয়েকটা সুপার মার্কেট রয়েছে। আর কিছু তুলনামূলক ছোট ছোট আছে আরো বেশ কয়েকটি। কয়েক কদম হাঁটলে পাওয়া যায় বাংলাদেশী আমেরিকানদের প্রিয় দুটো রেস্টুরেন্ট– ফুলকলি এবং রাঁধুনী। আশেপাশে ৯৯-সেন্ট স্টোর, জামা-কাপড়ের দোকান ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু আছে। রেস্টুরেন্ট দুটো পড়েছে ব্রুকলিনের মধ্যে। এদুটোর সামনে দিয়ে গেছে বড় রাস্তা ১০১ এভিন্যূ আর দুপাশ দিয়ে গেছে ফোরবেল স্ট্রীট এবং এলডার্ট লেন। এই এলাকায় বাজার করার জন্য বাঙ্গালী কমিউনিটির লোকজনের আগমন ঘটে অহরহ। মান্নান সুপারমার্কেট খোলা থাকে চব্বিশ ঘন্টা। যা-ই হোক, এই এলাকায় আমার যাতায়াত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আর কাছাকাছি এলাকায় বসবাস এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। ফোরবেল স্ট্রীটে একটা বড় মসজিদও আছে। এতো সম্পৃক্ততা এবং যাতায়াতের পরও একটা বিষয় কি করে আমার চোখ এড়িয়ে গেলো তা বুঝতেই পারছিনা। আমি কি ছাত্র জীবনের মতো এখনো মাথা নিচু করে হাঁটি!
অতি সম্প্রতি রাঁধুনী রেস্টুরেন্টে নাশতা করে ওজোন পার্ক ফার্মেসীর দিকে রওয়ানা হলাম ঔষধ আনার জন্য। ফার্মেসীটি কয়েক ব্লক ওদিকে। হঠাৎ উপরের দিকে সড়কের নাম সম্বলিত প্লেটের দিকে তাকিয়ে আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। এটা কি দেখছি! আগে দেখিনি কেনো! কখনোই চোখে পড়লোনা! ফোরবেল স্ট্রীট-এর নেইমপ্লেটে নিচের দিকে একটা দ্বিতীয় নাম লেখা আছে, তা হলো ‘মিজানুর রহমান ওয়ে’। তার মানে, এই রাস্তাটির দুটো নাম রয়েছে। অবাক হবার বিষয় দুটি, একটি হলো, নামটি হয়েছে বাংলাদেশী মানুষের নামে আর দ্বিতীয়টি হলো, এতোদিন এটা আমার চোখে পড়লোনা কেনো! ঘটনাটা আমাকে খুবই বিস্মিত করলো এবং এই মর্মে আমার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করলো যে, এই মিজান সাহেব সম্পর্কে আমার জানা দরকার।
বিষয়টি জানার জন্য সন্ধান শুরু হলো। ইন্টারনেটে বিচরণ শুরু করলাম। জানা গেলো, মিজানুর রহমান নামক এক বাংলাদেশী আমেরিকানকে কিছু ছেলে মেরে ফেলেছিলো এবং পরে তার নামে ফোরবেল স্ট্রীট-এর দ্বিতীয় নামকরণ হয়। কিছু ল্যাটিনো/হিসপানিক ছেলে একটা মটর সাইকেল নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলশ্রুতিতে বিবাদমান ছেলেদের যে কোন এক দলের ছেলেদের হাতে মিজান মারা যায়। কাঠের ব্যাট দিয়ে তার মাথায় আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়। হত্যার অভিযোগে দুটো ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়, ওদের মধ্যে একজন হত্যার দায় স্বীকার করে। কারন হিসেবে সে বলেছে, বিবাদমান অন্য একটা ছেলে মনে করে সে মিজানের মাথায় আঘাত করেছিলো। ছেলেটি এখন জেলে। আমি মিজান সাহেব সম্পর্কে আরো কিছু জানার চেষ্টা করেছি। কোন ছবি পাইনি। বিস্তারিত জানা যায়নি। যতটুকু জানতে পেরেছি তা আমাদের পাঠকবৃন্দের জন্য তুলে ধরছি।
মিজানুর রহমান একজন বাংলাদেশী ফটোসাংবাদিক। তিনি স্ত্রী ও এক শিশুপুত্র সহ ১৯৯৯ সালে আমেরিকা আসেন। তিনি এখানে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন এবং কমিউনিটি কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন। ২০০২ সালের ১১ই আগস্ট তিনি এক অবাঙ্গালী ছেলের হাতে নিহত হন। স্হানীয় সরকার ওনার নামে ফোরবেল স্ট্রীট-এর নাম রাখেন ‘মিজানুর রহমান ওয়ে’।
আমরা মিজান সাহেবের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
( নিউইয়র্ক / আমেরিকা। মাইন উদ্দিন আহমদ)